পাকিস্তান-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক?

পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: শেহবাজ শরীফ ও মুহাম্মদ ইউনুসের UNGA বৈঠক।

টুইট ডেস্ক: পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে জাতিসংঘের ৮০তম জেনারেল অ্যাসেম্বলি (UNGA) সেশনের সময় একটি উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন করে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বৈঠকের প্রেক্ষাপট

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে UN হেডকোয়ার্টার্সে। এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে, যেখানে SAARC-এর কার্যকারিতা সীমিত।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে কখনও উত্তেজনাপূর্ণ, কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। ২০২৪ সালের D-8 শীর্ষ সম্মেলন এবং চলতি বছরের আগস্টে দুই দেশের প্রতিশ্রুতি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।

বৈঠকের মূল আলোচনা

দুই নেতা দুই দেশের বর্তমান সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন এবং নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেন-

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা: দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্ব আরোপ। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ ইউনুসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি করবে।

আঞ্চলিক সংযোগ: SAARC-এর কার্যকারিতা সীমিত হওয়ায় বিকল্প পথে পরিবহন, অবকাঠামো এবং ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি।

জনগণ-থেকে-জনগণের বিনিময়: সাংস্কৃতিক, শিক্ষা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা, যাতে দুই দেশের যুবসমাজের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) এবং ১১টি জাতীয় কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কার, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি (১,০০০-এর বেশি মৃত্যু) এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেছেন, “পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও অগ্রগামী সম্পর্ক গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করবে।” অন্যদিকে ইউনুস বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

ফলাফল ও প্রত্যাশিত প্রভাব:

শেহবাজ ইউনুসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি এবং যৌথ প্রকল্পের সম্ভাবনা তৈরি করবে। SAARC-এর অভাবে এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৪ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্য রয়েছে।

জনপ্রতিক্রিয়া ও সামাজিক প্রতিধ্বনি:

সামাজিক মিডিয়ায় (#PMShehbazAtUNGA) এই বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাকিস্তানের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে হাজার হাজার লাইক এবং বাংলাদেশের অফিসিয়াল পোস্টও ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। অনেকে এটিকে “দক্ষিণ এশিয়ার নতুন যুগের সূচনা” হিসেবে অভিহিত করছেন।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ:

ঐতিহাসিক ইস্যু যেমন যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং ভৌগোলিক দূরত্ব কিছু চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। তবে, এই বৈঠক বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং যুব সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। বাংলাদেশের নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে এই গতি বজায় থাকলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

শেহবাজ শরীফ ও মুহাম্মদ ইউনুসের এই বৈঠক পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক সংযোগ, জনগণ-থেকে-জনগণের বিনিময় এবং জলবায়ু সচেতনতায় সহযোগিতা বৃদ্ধি এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।