ভারতের লাদাখে কারফিউ চলছে, সোনাম ওয়াংচুকের এনজিওর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল
লাদাখে কারফিউ চলছে, সোনাম ওয়াংচুকের এনজিওর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল: সহিংসতার পর কেন্দ্রের কড়া পদক্ষেপ, শান্তি ফিরছে ধীরে ধীরে।
টুইট প্রতিবেদক: লাদাখের রাজধানী লেহে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্যত্ব এবং ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে সহিংস বিক্ষোভে চারজন নিহত এবং ৮০-এর বেশি আহত হওয়ার পর আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) কারফিউ চলতে থাকলেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে।
নেপাল-বাংলাদেশের ছায়া: স্বাধীনতা না সরকার-পতন?
প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো রাস্তায় পাহারা দিচ্ছে এবং অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রণালয় (এমএইচএ) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করলেও আন্দোলনকারীরা চার্জশিট করতে চান।
এদিকে, পরিবেশকর্মী সোনাম ওয়াংচুকের এনজিও ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভ লার্নিং’ (এইচআইএএল)-এর ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (এফসিআরএ) লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, যা সহিংসতার একদিন পর এই পদক্ষেপকে ‘যাদুঘর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর), কী ঘটল নতুন?
ভোর ৬টায় লেহে কারফিউ কঠোরভাবে চালু রাখা হয়। সিকিউরিটি ফোর্স প্যাট্রোলিং বাড়িয়েছে। কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) শহরব্যাপী শাটডাউনের ডাক দিয়েছে, কিন্তু সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সকাল ১০টায় লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তা নিরাপত্তা পর্যালোচনা মিটিং করে বলেন, “বিদেশী ষড়যন্ত্রের হাত আছে—নেপাল এবং দোদা (জম্মু) থেকে বাইরের লোকজন আহতদের মধ্যে পাওয়া গেছে।” তিনি গ্রেপ্তার এবং তদন্তের নির্দেশ দেন।
দুপুর ১২টায় এমএইচএ সোনাম ওয়াংচুককে দায়ী করে বলে, “তাঁর উসকানিমূলক বক্তব্য—যেমন ‘জেন-জি রেভল্যুশন’ এবং নেপালের তুলনা—মব ভায়োলেন্স ঘটিয়েছে।” ওয়াংচুকের এনজিওর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল, যাতে বিদেশী ফান্ডিংয়ের অভিযোগ।
বিকেল ২টায় সিবিআই ওয়াংচুকের ইনস্টিটিউটে এফসিআরএ লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করে। ওয়াংচুক বলেন, “এটা উইচ-হান্টিং—আমরা বিদেশী ফান্ড নিই না, শুধু জ্ঞান বিক্রি করে ট্যাক্স দিয়ে আয় করি। সরকার আমাকে স্কেপগোট বানাচ্ছে।”
বিকাল ৪টায় লাদাখ সাংসদ মোহম্মদ হানিফা বলেন, “ছাত্রদের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।” লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি) ২৬ সেপ্টেম্বরের মিটিংয়ে অংশ নেবে, কিন্তু তাৎক্ষণিক সমাধান না পেলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
কেন এফসিআরএ বাতিল? সোনাম ওয়াংচুকের অভিযোগ
ওয়াংচুকের এনজিওটি বিদেশী ফান্ডিং ছাড়াই চলে—তারা জ্ঞান (যেমন প্যাসিভ সোলার হিটিং বিল্ডিং) বিক্রি করে আয় করে, যেমন ইউএনকে আফগানিস্তানের জন্য ফি। কিন্তু এমএইচএ বলছে, এটা লঙ্ঘন। ওয়াংচুক বলেন, “১০ দিন আগে সিবিআই নোটিস এসেছে, কিন্তু সহিংসতার পর এটা বাতিল—এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমার শান্তির আহ্বান ফেল করেছে, কিন্তু যুবকদের ক্ষোভ সত্যি।” এমএইচএ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াংচুকের ‘আরব স্প্রিং’ এবং ‘জেন-জি’ রেফারেন্স সহিংসতা উসকে দিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: অভিযোগ-পাল্টাপাল্টি
কেন্দ্র সরকার: এমএইচএ বলছে, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে—রিজার্ভেশন ৮৪% করা হয়েছে, ভোটি-পুর্গি ভাষা অফিসিয়াল। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লোক সহিংসতা ছড়িয়েছে।”
২৫-২৬ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত মিটিং ডাকা হয়েছে, কিন্তু হাই-পাওয়ার্ড কমিটির পরবর্তী মিটিং ৬ অক্টোবর।
বিজেপি: কংগ্রেসকে দায়ী করে বলছে, “এটা তাদের ষড়যন্ত্র—লেহের এক কংগ্রেস কাউন্সিলর সহিংসতায় লিড করেছে।” লাদাখ এলজি গুপ্তা বলেন, “বিদেশী হাত আছে, অ্যান্টি-ন্যাশনাল ফোর্স সহ্য করব না।”
কংগ্রেস ও বিরোধীরা দলের বক্তব্য
সুপ্রিয়া শ্রিনাতে বলেন, “সহিংসতা কোনো সমাধান নয়, কিন্তু মোদি সরকারের ২০১৯-এর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। মণিপুরের মতো উপেক্ষা করা যাবে না।” সামাজওয়াদী পার্টির অখিলেশ যাদব বলেন, “বিজেপির বিশ্বাসঘাতকতা যুবকদের ক্ষোভ বাড়িয়েছে।” পিডিপির মেহবুবা মুফতি বলেন, “কেন্দ্রকে মূল সমস্যা সমাধান করতে হবে।”
স্থানীয় নেতা কেডিএ-র হাজি গুলাম মুস্তফা বলেন, “৫ বছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস করা হলো—যুবকদের হতাশা বোঝা দরকার।”
কী পরিণতি? ভবিষ্যৎ কী?
হাসপাতালে আহতদের চিকিত্সা চলছে, কিন্তু কারফিউ এবং ইন্টারনেট সীমাবদ্ধতা অব্যাহত। লাদাখ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫-এর শেষ দিন বাতিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সীমান্তের কৌশলগত গুরুত্ব সত্ত্বেও এই সংকট ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সাজ্জাদ কার্গিলি বলেন, “যুবকরা হতাশ—সরকারকে শুনতে হবে, না হলে আরও খারাপ হবে।” এলএবি-কেডিএ ২৬ সেপ্টেম্বরের মিটিংয়ে অংশ নেবে, কিন্তু ফল না পেলে অনশন বাড়াতে পারে।
লাদাখের এই ‘রক্তক্ষয়ী দিন’ যুবকদের কণ্ঠস্বর তুললেও শান্তিপূর্ণ পথের আশা জাগিয়েছে। সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে—লাদাখ কি শান্ত হবে, নাকি ফুটবে আবার?