রাজশাহীতে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৩ কর্মীকে পেটালো নৌকার সমর্থকরা

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । ছবি : নিজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালানোর কারণে উপজেলার ৩ জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে পৃথক দুই ঘটনায় আহত ৩ জনকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার পাহাড়পুর গ্রামের রজনী ও অজিত কুমারকে প্রচারণা চালানোর সময় চায়ের স্টল থেকে বের করে বেদম পেটানো হয় এবং বালানগর গ্রামে কাঁচি প্রতিকের পোস্টার লাগানোর সময় লুৎফর রহমান নামে একজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। অহতরা সবাই বাগমারা আওয়ামী লী‌গের বি‌ভিন্ন ইউনি‌টের নেতা-কর্মী এবং কাঁচি প্রতিকের সমর্থক।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের  ২৬ বার ইউনিয়ন/পৌর নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়েছে । উপজেলার প্রায় ৩০টি স্থানে কাঁচির কর্মীরা সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছেন । এসব হামলায় আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৫০ জন সমর্থক। আহতদের মধ্যে অধিকাংশ বাগমারা আওয়ামী লী‌গের বি‌ভিন্ন ইউনি‌টের পদধারী নেতাকর্মী।

আহতদের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে । নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে আহতরা অভিযোগ করেছেন। পৃথক দুটি ঘটনায় রাতেই থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তাদের হাসপাতালে দেখতে যান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। এসময় তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।

এসময় তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ শান্ত বাগমারাকে পুনরায় অশান্ত করার চেষ্টা করছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা যত্রতত্রভাবে লোকজনকে পেটাচ্ছে। তবে বাগমারাবাসী এসকল নির্যাতনের জবাব দেবে আগামী ৭ জানুয়ারী ব্যালটের মাধ্যমে। কাঁচি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালানোর কারণে উপজেলার ৩ জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে।

এদিকে ২৩ ডিসেম্বর শনিবার রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ-সদস্য এনামুল হক সংবাদ সম্মেলন করে বাগমারায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কাঁচি প্রতীকের এ প্রার্থী অভিযোগ করেন, আমার নেতাকর্মীরা দিনের বেলায় পোস্টার লাগান। রাত নামলেই কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী কাঁচির সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।

এনামুল হক এমপি বলেন, সন্ধ্যা নামলেই কালামের সন্ত্রাসীরা তিন-চারটা নম্বর প্লেটবিহীন মাইক্রোবাস নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টহলে বের হচ্ছে। এসব মাইক্রোবাসে আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে। এলাকায় গিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা বলছে ভোট যেখানেই দাও, নৌকাই জিতবে।

এনামুল হক আরও বলেন, কালাম বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে টহলে বের হচ্ছেন কালামের স্ত্রী শায়লা পারভিন। আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সময় কালামের স্ত্রীও হামলায় অংশ নিচ্ছেন। আর গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাইক্রোবাস টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এবিষয়ে এক নির্বাচনী প্রচারনা পথসভায় আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করিনি। আমি ভাল মানুষ। উনি স্বতন্ত্র প্রার্থী একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছেন।

বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কালামের সন্ত্রাসীরা এখন পর্যন্ত (২৬ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের ২৬ বার ইউনিয়ন/পৌর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। উপজেলার প্রায় ৩০টি স্থানে কাঁচির কর্মীরা সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৫০ জন সমর্থক। আহতদের মধ্যে অধিকাংশ বাগমারা আওয়ামী লী‌গের বি‌ভিন্ন ইউনি‌টের পদধারী নেতাকর্মী।

এলাকাবাসী সূত্র হতে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগমারার জনগনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, মাইক্রোবাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে।

সূত্র আরোও জানায়, আবুল কালাম এক সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২০০৭ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের সময় পালাতে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় কালাম। তবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পরও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছাড়তে পারেননি।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী বাগমারাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। কালামের অব্যাহত সন্ত্রাসের কারণে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মাঝে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কালাম বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে রাজশাহী শহরে অবস্থান করছেন।

এদিকে নির্বাচনের আগেই বাগমারা হ‌তে অ‌বৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব‌হিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরু‌দ্ধে দ্রুত অ‌ভিয‌ান পরিচালনা করা দরকার ব‌লে মনে ক‌রেন এলাকাবাসী।