খাগড়াছড়িতে কিশোরীকে দলবদ্ধ শারীরিক হেনস্থা: আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধ/র্ষ-ণ: প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধের ডাক—একজন গ্রেপ্তার, অন্যরা পলাতক।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা জুড়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বক্তারা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বৃহস্পতিবার আধা বেলা সড়ক অবরোধ করা হবে।

২৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের একটি প্রাইভেট পড়া শেষে বাসায় ফেরার পথে কিশোরীটি অপহৃত হয়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা তাকে ফসলের খেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তার শারীরিক অবস্থাকে আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কিশোরীর পরিবার জানায়, প্রতিদিনের মতো সে প্রাইভেট টিউশনি শেষে বাড়ি ফিরছিল। নির্ধারিত সময়ে না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং রাত ১১টার দিকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। পরিবার অভিযোগ করেছে, ফেরার পথে কয়েকজন মিলে তাকে নির্যাতন করেছে।

মামলা ও পুলিশি পদক্ষেপ

বুধবার ভোরে কিশোরীর বাবা খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন অজ্ঞাত আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

থানার ওসি আবদুল বাতেন বলেন, “মামলার পরই অভিযান শুরু হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে, অন্যদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।” পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, “এই ধরনের জঘন্য অপরাধ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আমরা দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব।”

প্রতিবাদ কর্মসূচি ও দাবি

বুধবার সকাল ১০টার দিকে ‘জুম্ম ছাত্র–জনতা’ ব্যানারে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কয়ার, আদালত সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তারা পাহাড়ে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন, “পাহাড়ে বারবার নিরপরাধ মেয়েরা এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে, কিন্তু বিচার হয়নি। বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে।”

সমাবেশে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
২. ভুক্তভোগীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা
৩. পাহাড়ে নারী নিরাপত্তা জোরদার করা

সভায় সভাপতিত্ব করেন উক্যেনু মারমা এবং সঞ্চালনা করেন নেপোলিয়ন চাকমা। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সুমন চাকমা, বাগীশ চাকমা, কৃপায়ন ত্রিপুরা, আকাশ ত্রিপুরা, ওয়াপাই মারমা ও অংক্যমং মারমা প্রমুখ।

পূর্বের ঘটনা

চলতি বছরে খাগড়াছড়ি ও আশপাশের এলাকায় একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ জুন অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী দলবদ্ধভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। গত সপ্তাহেও দুটি অনুরূপ ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্তের ধীরগতি ও বিচারহীনতার অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে ঘোষণা দেওয়া সড়ক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে জেলার স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্লাস বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত ও ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছে।