বান্দরবান সীমান্তে আহত হাতি নো ম্যানস ল্যান্ডে, মাইনের ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে মা-বাচ্চা বন্যহাতি আহত: ফসল ক্ষতিগ্রস্ত, আতঙ্ক ছড়ালো

বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অশান্ত অঞ্চলে স্থলমাইনের ভয়াবহতা ফের প্রকাশ পেয়েছে। মায়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি পুঁতে রাখা স্থলমাইনের বিস্ফোরণে একটি মা বন্যহাতি গুরুতর আহত হয়েছে। আহত হাতিটি তার বাচ্চার সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জামছড়ি এলাকায় প্রবেশ করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষকদের ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিস্ফোরণ ও সীমান্ত অতিক্রম

ঘটনাটি সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় মা হাতিটির ডান পায়ের গোড়ালি গুরুতরভাবে আহত হয়। আহত হাতিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাচল করছে, এবং তার বাচ্চা পাশে রয়েছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে তারা আতঙ্কিত হন।

২৩ শে সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা পর্যন্ত আহত হাতিটি সীমান্ত এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছিল। এর আগে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ৪৪ ও ৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের মায়ানমারের সামান্য ভেতরের অংশে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের ক্ষতি ও প্রতিক্রিয়া

আহত হাতিটির চলাচলে কৃষক মো. রশিদ আহমেদের ধানখেত এবং পানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় নুরুল আলম বলেন, “বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এই অঞ্চলে মাইনের ভয়ে আমরা সবাই সতর্ক থাকি।” স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন যে, সীমান্তবর্তী বন্যপ্রাণীর জন্য এটি নতুন হুমকি সৃষ্টি করছে।

কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাশরুরুল হক জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে বন্যপ্রাণী অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং আহত হাতিটির চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণী অধিদপ্তরের নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ অফিসার মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, তারা হাতিটির অবস্থার প্রতি নজর রাখছেন।

পূর্বের অনুরূপ ঘটনা

মাস খানেক আগে, ১১ আগস্ট ২০২৫-এ একই এলাকার সীমান্তবর্তী স্থলমাইনের বিস্ফোরণে আরেকটি বড় আকারের বন্যহাতি আহত হয়েছিল। সেই ঘটনায় ১৫ জন বনকর্মী আহত হন, যার মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর ছিল। আহত হাতিটি রক্তশূন্যতায় ভুগে এবং খুঁড়িয়ে চলাচল করছিল।

সীমান্তে মাইন ঝুঁকি

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের এই অশান্ত এলাকা বন্যপ্রাণী এবং স্থানীয় জনজীবনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় বন্যহাতির অভিবাসন স্বাভাবিক হলেও স্থলমাইনের কারণে ঝুঁকি বেড়েছে। সাড়ে ৮ বছরে এই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অন্তত ৪৪ জন পা হারিয়েছেন, যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয়রা অন্তর্ভুক্ত।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সমাধানের আহ্বান

ইউএনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সীমান্তে যৌথ মাইন অপসারণ অভিযান শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তের মাইন অপসারণে বাংলাদেশ-মায়ানমার যৌথ উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটি স্থানীয় জনজীবন, কৃষি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য জরুরি।

বর্তমানে আহত হাতিটির চিকিৎসা চলছে এবং কর্তৃপক্ষ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি মনিটর করছেন। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং সীমান্তের স্থলমাইনের হুমকি কমাতে জরুরি পদক্ষেপের দাবি তুলেছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও মানবিক সংগঠনগুলো।

এই ঘটনায় সীমান্ত অঞ্চলের শান্তি, পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে।