এরদোগান-ট্রাম্প মুখোমুখি: রাশিয়া-চীনের বিকল্প যুদ্ধযান প্রস্তুত!

এরদোগান-ট্রাম্প বৈঠক: এফ-৩৫ বিতর্ক তুরস্ককে রাশিয়া-চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

বিশ্ব ডেস্ক: জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের (ইউএনজিএ) সাইডলাইনে বুধবার হোয়াইট হাউসে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হলো তুরস্কের দীর্ঘদিনের দাবি—এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেটের সরবরাহ, যা ২০১৯ সালে রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম কেনার কারণে তুরস্ককে প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই আলোচনায় কোনো সমাধান না হয়, তবে তুরস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা দেভলেত বাহচেলির সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত ‘টিআরসি’ (তুরস্ক-রাশিয়া-চীন) জোট অনুসারে মস্কো এবং বেইজিং-এর দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে রাশিয়ার সু-৫৭ এবং চীনের জে-৩৫ ফাইটার জেট অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যতক্ষণ না তুরস্কের নিজস্ব কান ফাইটার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তুত হয়। এ সম্ভাবনা ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে ধরা হচ্ছে।

বৈঠকের পটভূমি: এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ আলোচনার গুরুত্ব

এরদোগানের নিউইয়র্ক সফরের মূল লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে বৈঠকে এফ-৩৫, এফ-১৬ ডিল এবং বোয়িং-এর বড় অর্ডার নিয়ে আলোচনা হবে। তুরস্ক ইতিমধ্যেই এফ-১৬-এর ৪০টি জেট অর্ডার নিশ্চিত করেছে এবং বোয়িং-এর ২৫০টি বিমান ক্রয় পরিকল্পনা হাতে রেখেছে।

এরদোগান সোমবার বলেন, “আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করব।” তুরস্ক ২০১৯ সালে এস-৪০০ কেনার কারণে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়েছে এবং ১.৪ বিলিয়ন ডলারের পেমেন্ট ফেরত পেয়েছে, কিন্তু তারা এখনো জেটগুলো ফেরত চাইছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্র্যাগম্যাটিক অবস্থান নেবে, তবে কংগ্রেসের ইসরায়েল-পন্থী লবি ও তুরস্কের সিরিয়া-গাজা নীতি বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বাহচেলির ‘টিআরসি’ প্রস্তাব

তুরস্কের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পার্টি (এমএইচপি) নেতা দেভলেত বাহচেলি সেপ্টেম্বর ১৯ তারিখে টিআরসি জোট প্রস্তাব করেন। জোটটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের ‘দুষ্ট জোট’-এর বিরুদ্ধে তুরস্ক-রাশিয়া-চীনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসেবে ধরা হয়েছে। বাহচেলি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে টিআরসি অক্ষ গড়ে তোলা দরকার, যাতে ইসলামী বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।” এরদোগান এই প্রস্তাবকে আংশিকভাবে সমর্থন করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি মূলত এরদোগানের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাহচেলির শক্তি প্রদর্শনের কৌশল। এছাড়া, বাহচেলি ন্যাটোর মতো ইসলামী নিরাপত্তা সংস্থা গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

এফ-৩৫-এর বিকল্প: সু-৫৭ ও জে-৩৫

যদি বৈঠকে এফ-৩৫ সমাধান না হয়, তুরস্ক রাশিয়ার সু-৫৭ এবং চীনের জে-৩৫ অন্তর্বর্তী বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। সু-৫৭ একটি টুইন-ইঞ্জিন পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার, যা ২০২৩ সাল থেকে রাশিয়ার বিমানবাহিনীতে সরবরাহ হচ্ছে। চীনের জে-৩৫ (এফসি-৩১ রপ্তানি সংস্করণ) এফ-৩৫-এর মতো স্টিলথ ক্ষমতা সম্পন্ন। তুরস্কের নিজস্ব কান ফাইটার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তুত হবে।

এ ধরনের বিকল্প ন্যাটোর জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এটি এফ-৩৫ প্রযুক্তির লিক এবং অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

তুরস্ক ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী। এফ-৩৫ বিকল্প নির্বাচনের ফলে ন্যাটোর স্টিলথ প্রযুক্তির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি তুরস্কের ‘আমেরিকা-প্রথম’ নীতি থেকে ‘বহুপাক্ষিক’ নীতির দিকে স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করবে, যা ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় জটিলতা বাড়াবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় #ErdoganTrump এবং #TRCAllience হ্যাশট্যাগে সমর্থকরা এটিকে ‘স্বাধীনতার পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে সমালোচকরা ন্যাটো-র নিরাপত্তা ঝুঁকি ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

এরদোগানের নিউইয়র্ক সফর ২৬ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এর মধ্যে তিনি চীন, ইতালি, কানাডা, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএমএফ-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফর তুরস্কের বহুপাক্ষিক নীতি এবং পশ্চিমা নির্ভরতায় কমানো প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈঠকের ফলাফল মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক এবং কূটনৈতিক ভারসাম্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।