কাবুল থেকে দিল্লি: ল্যান্ডিং গিয়ারে লুকিয়ে কিশোরের হৃদয়স্পর্শী গল্প

ছবি : দ্য ডেইলি গার্ডিয়ান

১৩ বছরের আফগান কিশোরের ঝুঁকিপূর্ণ উড়ান: কৌতূহল না অজানা স্বপ্ন?

টুইট প্রতিবেদক: কাবুলের ধুলোবালির রাস্তা থেকে দিল্লির ঝকঝকে বিমানবন্দর—একটি ১৩ বছর বয়সী আফগান কিশোরের অবিশ্বাস্য যাত্রা মানুষের মনে কৌতূহল, আশা এবং আবেগের ঝড় তুলেছে।

এই কিশোর, যার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি, কেএএম এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আরকিউ-৪৪০১-এর ল্যান্ডিং গিয়ার কম্পার্টমেন্টে লুকিয়ে কাবুল থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছিল। এটি ছিল কম্পার্টমেন্টে লুকিয়ে এই কিশোর ৯৪ মিনিটের একটি ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা।

কিন্তু এই দুঃসাহসিক যাত্রার পেছনে রয়েছে একটি গল্প, যা আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায়, যখন বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে দিল্লির মাটিতে নামে, তখন কেউই জানত না যে বিমানের পিছনের কেন্দ্রীয় ল্যান্ডিং গিয়ার বগিতে একটি কিশোরের স্বপ্ন লুকিয়ে আছে। কুন্দুজ শহরের এই কিশোর গোপনে কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে, নিজেকে বিমানের একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সঙ্কীর্ণ জায়গায় লুকিয়ে ফেলেছিল। তার ইচ্ছা ছিল ইরানে পৌঁছানো, কিন্তু ভুল করে সে এই ফ্লাইটে উঠে পড়ে। দুই ঘণ্টার কম সময়ের এই যাত্রায় সে বেঁচে থাকবে কিনা, তা ছিল প্রায় অসম্ভব। তবু, সে বেঁচে গেছে—একটি অলৌকিক ঘটনা!

কী তাকে এত বড় ঝুঁকি নিতে প্ররোচিত করল? একটি নতুন জীবনের স্বপ্ন? নাকি কেবল একটি কিশোরের কৌতূহল?

বিমানবন্দরে অবতরণের পর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখে বিমান সংস্থার কর্মীরা তাকে আটক করেন। কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয় এই ছোট্ট ছেলেটিকে, যার চোখে তখনও হয়তো অজানা এক ভবিষ্যতের আলো ঝিলিক দিচ্ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে জানায়, সে কেবল কৌতূহলবশত এই কাজ করেছে। কিন্তু তার কথার মাঝে কি লুকিয়ে ছিল একটি অসহায় মনের আর্তি? নাকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে নতুন জীবনের সন্ধান?

এই কিশোরের গল্প শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রমাণ—মানুষের স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার তাগিদ কতটা শক্তিশালী হতে পারে। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে তাকে একই ফ্লাইটে করে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তার এই সাহসী পদক্ষেপ আমাদের মনে একটি প্রশ্ন রেখে গেছে—এই কিশোর কি কেবল একটি দুঃসাহসিক কাজ করেছিল, নাকি তার পেছনে ছিল একটি অজানা গল্প, যা আমরা কখনো জানতে পারব না?

কীভাবে বেঁচে গেল এই কিশোর?

বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কম্পার্টমেন্টে লুকিয়ে যাওয়া কোনো সাধারণ কাজ নয়। ৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় তাপমাত্রা নেমে যায় -৬০° সেলসিয়াসে, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, এবং চাকার যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ২০%। তবু এই কিশোর বেঁচে গেছে। কীভাবে?

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন মোহন রঙ্গনাথন ব্যাখ্যা করেন, “ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা টেকঅফের পর বন্ধ হয়ে যায়, এবং ভেতরের তাপমাত্রা যাত্রী কেবিনের কাছাকাছি থাকতে পারে। সম্ভবত এই কিশোর এমন একটি আংশিক চাপযুক্ত জায়গায় ছিল, যা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” ডাঃ রিতিন মোহিন্দ্রা, একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, যোগ করেন, “উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা হাইপোথার্মিয়ায় মৃত্যু ঘটতে পারে। এই কিশোরের বেঁচে থাকা সত্যিই একটি অলৌকিক ঘটনা।”

এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কত মানুষ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। এই কিশোরের গল্প হয়তো শেষ হয়েছে কাবুলের মাটিতে ফিরে গিয়ে, কিন্তু তার স্বপ্নের উড়ান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থেকে যাবে।