দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নৌবাহিনীর নতুন মাইলফলক
চীনের ফুজিয়ান ক্যারিয়ারে সফল ক্যাটাপল্ট লঞ্চ: J-15T, J-35 ও KJ-600-এর প্রথম উড্ডয়ন ও অ্যারেস্টেড ল্যান্ডিং
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএ নেভি) সোমবার ঘোষণা করেছে, তাদের সর্বশেষ বিমানবাহী নৌকা ফুজিয়ান (টাইপ ০০৩) সফলভাবে প্রথমবারের মতো ক্যাটাপল্ট-অ্যাসিস্টেড টেকঅফ এবং অ্যারেস্টেড ল্যান্ডিং সম্পন্ন করেছে। এই অভিযানে J-15T, J-35 স্টিলথ ফাইটার এবং KJ-600 এডব্লিউএসি বিমান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এটি চীনের প্রথম স্বদেশী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট (ইএমএএলএস) এবং রিকভারি সক্ষমতার প্রমাণ, যা দেশের নৌবাহিনীর সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
পিএলএ নেভির বিবৃতি অনুযায়ী, প্রশিক্ষণটি দক্ষিণ চীন সাগরে পরিচালিত হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, J-15T মাল্টিরোল ফাইটার, J-35 স্টিলথ ফাইটার এবং KJ-600 এডব্লিউএসি ফুজিয়ানের ডেক থেকে ইএমএএলএসের সাহায্যে উড়ে যায় এবং অ্যারেস্টিং গিয়ার ব্যবহার করে নিরাপদে ল্যান্ড করে। এই সফলতা চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে, যা এমন অ্যাডভান্সড টেকনোলজি নিজস্বভাবে তৈরি করেছে।
সিসিটিভি’র একটি ডকুমেন্টারিতে এই অভিযানের ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে, যা পিএলএ নেভির ৯৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে রিলিজ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ক্যাটাপল্ট সিস্টেম বিমানগুলোকে ভারী লোড নিয়ে উড়তে সক্ষম করছে, যা চীনের নৌবাহিনীকে দূর-প্রসারী শক্তি প্রক্ষেপণে সহায়তা করবে।
এই তিনটি বিমান ফুজিয়ানের এয়ার উইং-এর মূল অংশ হবে। J-15T মাল্টিরোল ফাইটার ক্যাটাপল্ট-অপটিমাইজড J-15 ভ্যারিয়েন্ট, ডুয়াল ইঞ্জিন ও ২৫০০ কিমি রেঞ্জের। এটি এয়ার সুপিরিয়রিটি এবং গ্রাউন্ড অ্যাটাক মিশনে ব্যবহৃত হবে। J-35 পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার, F-35C-এর মতো, ১৮০০ কিমি রেঞ্জ এবং লো-রাডার সিগনেচারযুক্ত। এটি ফুজিয়ানের প্রধান ফাইটার হিসেবে প্রত্যাশিত। KJ-600 এডব্লিউএসি বিমানটি টুইন-টার্বোপ্রপ, E-2 হকআই-এর মতো, ৩৬০° রাডার কভারেজ এবং ৫০০ কিমি রেঞ্জের। এটি এয়ারবর্ন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের কাজ করবে।
ফুজিয়ানের এয়ার উইং-এ মোট ৫০+ বিমান থাকবে, যার মধ্যে ৪০টি ফিক্সড-উইং এবং ১২টি হেলিকপ্টার। এই অভিযান প্রমাণ করে যে ফুজিয়ান এখন সম্পূর্ণ ক্যাটাপল্ট-অ্যাসিস্টেড টেকঅফ এবং অ্যারেস্টেড রিকভারি (CATOBAR) ক্ষমতা অর্জন করেছে, যা আগের দুটি ক্যারিয়ার (লিয়াওনিং এবং শানডং)-এর স্কি-জাম্প সিস্টেমের তুলনায় অনেক উন্নত।
ফুজিয়ান (সিভিএন ০১৮) ২০২২ সালের জুনে লঞ্চ হয়। এটি চীনের প্রথম স্বদেশী ক্যাটাপল্ট-সজ্জিত ক্যারিয়ার, যার ওজন প্রায় ৮০,০০০ টন। এতে তিনটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপল্ট, অ্যাঙ্গেল্ড ফ্লাইট ডেক এবং অ্যাডভান্সড অ্যারেস্টিং গিয়ার রয়েছে। ২০২৪ সাল থেকে একাধিক সি-ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ২০২৫ সালের মে মাসে J-35-এর টেস্ট ফ্লাইট অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্প্রতি এটি তাইওয়ান স্ট্রেইট অতিক্রম করেছে, যা চীনের নৌশক্তি প্রক্ষেপণের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীনের এই অগ্রগতি নৌবাহিনীর ‘ব্লু-ওয়াটার’ সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যা দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান স্ট্রেইট এবং ভারত মহাসাগরে শক্তি প্রয়োগে সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ফুজিয়ান সম্পূর্ণ অপারেশনাল হবে, এবং টাইপ ০০৪ নামক পরবর্তী ক্যারিয়ারও ধীরে ধীরে যুক্ত হবে।
চীনের এই ঘোষণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ হাজারো পোস্টে এটিকে ‘চীনের নৌশক্তির নতুন যুগ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং অন্যান্য দেশগুলো এটিকে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। পিএলএ নেভি জানিয়েছে, এই অগ্রগতি জাতীয় প্রতিরক্ষা ও শান্তি রক্ষায় অবদান রাখবে।