ভারতের মহোবায় ভোটার তালিকায় বড় গণ্ডগোল: এক ঘরে ৪,২৭১ ভোটার
মহোবা: এক ঘরে ৪,২৭১ ভোটার, নির্বাচনী আস্থায় ধাক্কা
বিশ্ব ডেস্ক: ভারতের উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলার জৈতপুর গ্রামপঞ্চায়েতে এক বিস্ময়কর ঘটনা সামনে এসেছে—মাত্র ১৬ ফুট বাই ১৫ ফুটের একটি চার কামরার বাড়িতে ভোটার তালিকায় ৪,২৭১ জনের নাম যুক্ত। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, জৈতপুরের মোট ১৬,০৬৯ ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ একই ঠিকানায় ‘থাকে’।
এ ঘটনায় শুধু গ্রামবাসীরাই নয়, রাজনৈতিক পর্যায়েও ব্যাপক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
মহোবা জেলার কুলপাহাড় তহসিলের অন্তর্গত বাড়ি নম্বর ৮০৩ সাধারণত ১০ জনের বাসস্থান। তবে ভোটার তালিকার খসড়ায় ২২৮৩ থেকে ৬৯৬৯ পর্যন্ত মোট ৪,২৭১ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। বুথ লেভেল অফিসার রশ্মি দুর এই অসঙ্গতি লক্ষ্য করে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায়।
একই তহসিলের পনওয়ারি গ্রামপঞ্চায়েতের ওয়ার্ড ১৩-এও অনুরূপ সমস্যা দেখা গেছে। মাত্র ২–৬ জনের বাসিন্দা থাকা বাড়ি নম্বর ৯৯৬-এ ১৮৫ জন এবং বাড়ি নম্বর ৯৯৭-এ ২৪৩ জন ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত। এই গণ্ডগোল শনাক্ত করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এআই-ভিত্তিক যাচাই অভিযান চালিয়েছে।
কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা
জেলা নির্বাচন অফিসার আর.পি. বিশ্বকর্মা দাবি করেছেন, এটি ‘লিপিকীয় ত্রুটি’। তাঁর মতে, ভোটাররা সত্যিই বৈধ, কেবল ঠিকানা ভুলভাবে যুক্ত হয়েছে। সংশোধনের জন্য ২৭২টি গ্রামপঞ্চায়েতে ৪৮৬ জন বুথ কর্মকর্তা ও ৪৯ জন সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। এআই-ভিত্তিক যাচাইয়ে এক লাখেরও বেশি সন্দেহজনক বা পুনরাবৃত্ত ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। বাড়ি নম্বর ৮০৩-এর মালিকা বলেছেন, “৪,২৭১ ভোটার! প্রথমে ভেবেছিলাম মজা করছেন।” পনওয়ারির এক বাসিন্দা প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি এক ঘরে হাজার হাজার ভোটার সম্ভব হয়, তাহলে আমাদের ভোট নিরাপদ কি?”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। AAP এমপি সঞ্জয় সিং এটিকে ‘প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে ভোটার তালিকার বড় অসঙ্গতি’ বলে অভিহিত করেছেন। সমাজবাদী পার্টি ও অন্যান্য বিরোধীরা ভোট চুরির অভিযোগ তুলে তদন্ত দাবি করেছে। স্থানীয় নেতা চৌধুরী রবীন্দ্র কুমার বলেন, “এটি ছোট ভুল নয়; আস্থা নষ্ট করেছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে। এক পোস্টে বলা হয়েছে, “এক ঘরে ৪,২৭১ ভোটার—এটা কমেডি না ট্র্যাজেডি?”
উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় এ ধরনের গণ্ডগোল নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও এআই-ভিত্তিক যাচাই অভিযান চালানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট বেড়েছে। রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও এমন অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। বিপক্ষ দলগুলো কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করছে, যাতে ‘ফেক ভোটার’ তৈরির অভিযোগের তদারকি করা যায়।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশোধন কাজ চলছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সময়মতো সমাধান না হলে ২০২৬ সালের নির্বাচনী পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। গ্রামবাসীরা এখন অপেক্ষায়—যাতে তাদের ভোটের মূল্য রক্ষা পায়।