টার্কি–যুক্তরাষ্ট্রে F-16 ও F-35 ক্রয় আলোচনার প্রস্তুতি

টার্কি–যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তির পথে: F-16, F-35 এবং বোয়িং ক্রয় আলোচনার প্রস্তুতি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টার্কি প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সাক্ষাতের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনা চলছে। সাক্ষাতের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো টার্কি-কেন্দ্রিক বিস্তৃত সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি, যার মধ্যে F-16 এবং F-35 ফাইটার জেট এবং বোয়িং কমার্শিয়াল জেটের ক্রয় অন্তর্ভুক্ত।

টার্কি-কেন্দ্রিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট @TurkishCentury এই সাক্ষাতকে টার্কির “ঐতিহাসিক অপমানের প্রতিশোধ” এবং স্বদেশী প্রতিরক্ষা শিল্পের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিত্রিত করেছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে রাশিয়ার S-400 কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের CAATSA নিষেধাজ্ঞা এবং ইসরায়েলের রাজনৈতিক প্রভাব টার্কির জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তবে চুক্তির অর্থনৈতিক সুবিধা স্পষ্ট, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে এটি টার্কির সামরিক স্বাধীনতাকে আংশিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

সাক্ষাতের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট

এরদোগান-ট্রাম্প সাক্ষাতের সময় মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আলোচনা হবে। টার্কি ইরান, সিরিয়া ও ইসরায়েলে তার কৌশলগত অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প সম্প্রতি একটি টুইটে উল্লেখ করেছেন, “আমরা অনেক বাণিজ্যিক এবং সামরিক চুক্তির উপর কাজ করছি, যার মধ্যে বোয়িং বিমানের ব্যাপক ক্রয়, F-16-এর একটি বড় চুক্তি এবং F-35-এর আলোচনা রয়েছে।”

টর্কি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তির সম্ভাব্য মূল্য ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে: ২৫০-এর বেশি বোয়িং কমার্শিয়াল জেট, ৪০টি F-16 ভাইপার এবং ৪০টি F-35 স্টিলথ ফাইটার। এটি রয়্যাল টার্কিশ এয়ার ফোর্স (TuAF)-কে আধুনিকীকরণ করবে, যা ২০১৯ সালে F-35 প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

F-16 এবং F-35: প্রতিশ্রুতির অপূর্ণতা

@TurkishCentury পোস্টে বলা হয়েছে, F-16 চুক্তি F-35 প্রোগ্রামের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। টার্কি ১৯৯৯ সাল থেকে জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার (JSF) প্রোগ্রামের অংশীদার ছিল এবং ১.৪ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে রাশিয়ার S-400 কেনার কারণে প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ে। পোস্টে এটিকে “যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য তিনটি কারণ: ইসরায়েলের আপত্তি, AIPAC-এর মার্কিন কংগ্রেসে প্রভাব এবং টার্কির স্বদেশী প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা।

চুক্তির সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব

চুক্তির মাধ্যমে টার্কি বিমানবাহিনী ৪র্থ ও ৫ম প্রজন্মের ফাইটার জেটের ক্ষমতা অর্জন করবে। এটি TuAF-এর আকাশ যুদ্ধ এবং স্ট্র্যাটেজিক প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করবে। তবে এটি টার্কির স্বদেশী প্রকল্প KAAN-এর উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে।

চুক্তির সম্ভাব্য অস্ত্র ও সরঞ্জামসমূহের মধ্যে রয়েছে;

F-16 ভাইপার: TuAF-এর বিদ্যমান বহরে নতুন সংযোজন; আকাশযুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং F-35 স্টিলথ ফাইটার: আধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তি; আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি।

বোয়িং কমার্শিয়াল জেট: বাণিজ্যিক বিমান বহরের সম্প্রসারণ; আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজ।

এছাড়াও, বোয়িং, লকহিড মার্টিন, নর্থ্রপ গ্রুম্যান ও অন্যান্য বড় মার্কিন কোম্পানি চুক্তিতে সরাসরি যুক্ত থাকবে। চুক্তিটি টার্কি-বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে এবং TuAF-এর আধুনিকীকরণকে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

এরদোগান-ট্রাম্প সাক্ষাত ও সম্ভাব্য চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে টার্কির কৌশলগত অবস্থান ও সামরিক সক্ষমতাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে।

F-16, F-35 এবং বোয়িং কমার্শিয়াল জেটের সংযোজন টার্কির আকাশ প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যিক সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে, যদিও স্বদেশী প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলোর উপর কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।