তালেবান বার্তা: বাগরাম চাইলে ২০ বছর যুদ্ধও প্রস্তুত

তালেবানের কড়া সতর্কতা: বাগরাম ফেরানো হলে ‘আরও ২০ বছর যুদ্ধ করতে প্রস্তুত’ — ট্রাম্পের হুমকির জবাবে মজবুত প্রতিরোধের ঘোষণা।

টুইট ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগরাম এয়ারবেস ফিরিয়ে নেওয়ার হুমকির জবাবে তালেবান কড়া সতর্কতা জারি করেছে। আফগান রক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেছেন, “যদি আপনারা বেস চান, আমরা আরও ২০ বছর লড়াই করতে প্রস্তুত।”

তালেবানের সেনা প্রধান ফাসিহুদ্দিন ফিতরাতও জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, “আফগানিস্তানের মাটির এক ইঞ্চও চুক্তির বিষয় নয়।” এই ঘোষণাকে আফগান সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্পের হুমকি এবং বাগরামের কৌশলগত গুরুত্ব

বাগরাম এয়ারবেস কাবুলের উত্তরে অবস্থিত। এটি ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মাণ করেছিল। ২০০১ সালের ৯/১১-এর পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। ২০১২ সালে এক সময় এখানে ১ লাখের বেশি মার্কিন সৈন্য অবস্থান করেছিল। বেসে তালেবান, আল-কায়েদা ও আইএসের বিরুদ্ধে অপারেশন চালানো হতো এবং একটি কুখ্যাত কারাগার পরিচালিত হতো। ২০২১ সালের ২ জুলাই মার্কিন বাহিনী রাতারাতি বেস ছেড়ে চলে যায়, এবং তালেবান ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর বেসটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

ট্রাম্প ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বাগরাম ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বাগরাম ফিরিয়ে নিতে চাই। এটি চীনের নিউক্লিয়ার মিসাইল তৈরির স্থান থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরে। আমরা এটি বিনামূল্যে দিয়েছি।” ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তালেবানের কাছ থেকে বেস ফেরত পেতে অর্থনৈতিক সাহায্য বা অন্যান্য চুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে স্যাটেলাইট ও পর্যবেক্ষণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তালেবানের অধীনে বেসে কার্যক্রম খুব সীমিত এবং চীনের কোনো উপস্থিতি নেই।

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক হুমকি ও সম্ভাবনা

প্রায় এক সপ্তাহ আগে মার্কিন হোস্টেজ এনভয়ি অ্যাডাম বোয়েলার এবং সাবেক বিশেষ দূত জালমাই খলিলজাদ কাবুলে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যদিও অফিসিয়ালি বাগরাম নিয়ে আলোচনা হয়নি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম X-এ #BagramBase এবং #TalibanVsUS হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তালেবানের প্রতিরোধকে সমর্থন বা সমালোচনা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলায় তালেবান দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। সম্ভাব্য কৌশল হতে পারে বেস লিজ, অর্থনৈতিক চুক্তি, বা খনিজ সম্পদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সংলাপ। তবে কোন পদক্ষেপই সরাসরি হুমকি বা সামরিক উপস্থাপনার বিকল্প হিসেবে যথেষ্ট নয়।

বাগরাম ইস্যু শুধু সামরিক নয়, এটি কূটনৈতিক, কৌশলগত ও রাজনৈতিক বিবেচনারও। ট্রাম্প যদি বেস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন, তবে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্য, স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আঞ্চলিক শক্তির (বিশেষত চীন ও পাকিস্তান) ভাবনা বিবেচনায় আনতে হবে। সামরিক উপস্থিতি সব সমাধান নয়; তাই কৌশলগত আলোচনাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ।

ট্রাম্পের হুমকি ও তালেবানের প্রতিরোধ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কৌশলগত অবস্থানকে নতুন আলোকে দাঁড় করাচ্ছে। কোনো কার্যকর সমাধানের জন্য কূটনৈতিক সংলাপ ও আঞ্চলিক সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।