বান্দরবানের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু: প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে
পুরনো বেইলি সেতুতে ১০-১৫ টনের ভারী যানবাহন চলাচল, দ্রুত সংস্কার বা নতুন স্থায়ী সেতুর দাবি স্থানীয়দের।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার সদর ও দূরের ৭টি উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অবস্থিত অসংখ্য বেইলি সেতু দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সেতুর বেশিরভাগ ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত।
সেতুগুলোর অধিকাংশে পাঁচ টনের বেশি যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও নিয়মের ধারাবাহিক লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক মানুষ এবং ভারী ট্রাক, কাঠ, বালি, পাথর ও ইটবাহী যানবাহন এসব সেতু পারাপার করছে।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, সাত উপজেলায় মোট ১১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি এবং বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে ৬৬টি সেতু সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ৫৪।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুতে লোহার পাতার টান উঠে গেছে, কোথাও দেবে গেছে, আবার কোথাও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিছু সেতুর স্প্রিং পর্যন্ত খুলে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সিএনজি চালক নূরুল আলম বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর পাশে লেখা থাকে পাঁচ টনের বেশি গাড়ি চলাচল নিষেধ। কিন্তু প্রতিদিনই ১০-১৫ টনের ভারী গাড়ি পার হচ্ছে। এত ভারী গাড়ি সেতুতে নিরাপদ নয়।”
পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ির চালক মংক্যনুং মারমা বলেন, “সেতুগুলো পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী ট্রাক চললে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। পর্যটক নিয়ে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে যায়।” স্থানীয় বাসিন্দা আসাং ম্রো বলেন, “বেইলি ব্রিজগুলোতে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।”
চাঁদের গাড়ি চালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, “গাড়ি পার হওয়ার সময় বুকটা ধরফর করে। রুমা-থানচি সড়কের তিন মাইল এলাকায় কয়েক মাস আগে এক পাশ দেবে গিয়ে চার ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ হয়েছিল। বর্ষায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। বেইলি ব্রিজ ভেঙে আরসিসি ব্রিজ করলে হাজারো মানুষের দুর্ভোগ কমবে।”
বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, “৬৬টি বেইলি সেতুর মধ্যে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিবছর মেরামত করি। বাস্তবতার কারণে পাঁচ টনের বেশি ভারী গাড়ি চলাচল করছে, ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বেইলি সেতু স্থায়ী আরসিসি সেতুতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দুটি সড়কে ২২টি বেইলি সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হবে। অবশিষ্ট সেতুর জন্য চট্টগ্রাম জোন থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ধাপে ধাপে সব সেতু স্থায়ী করা হবে, যা সড়ক যোগাযোগকে নিরবিচ্ছিন্ন করবে এবং জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।”