ট্রাম্পের ১ লাখ ডলার ফি: এইচ-১বি ভিসায় ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন H-1B ভিসা আবেদনকারীদের জন্য বার্ষিক $১ লাখ ফি, ভারত সরকারের সতর্কবার্তা: পরিবার ও পেশাজীবীদের জীবন ঝুঁকিতে।

টুইট প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সাম্প্রতিক H-1B ভিসা ফি বৃদ্ধির ঘোষণা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে, যেখানে H-1B ভিসার সুফলভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প একটি এক্সিকিউটিভ প্রোক্লামেশন সাইন করে H-1B আবেদনকারীদের জন্য বার্ষিক ফি $১ লাখ (প্রায় ৮৮ লাখ টাকা) নির্ধারণ করেছেন। নতুন নিয়মটি নতুন আবেদনকারীদের জন্য কার্যকর হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) ‘মানবিক সংকট’ এবং পরিবারের জীবনযাপনে ব্যাঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এবং বিষয়টির পূর্ণ তাৎপর্য খতিয়ে দেখার কথা উল্লেখ করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের নিশ্চিত করার নামে H-1B ভিসায় ফি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। H-1B ভিসা মূলত উচ্চ দক্ষতার পেশাজীবীদের জন্য (বিশেষ করে টেক সেক্টরে) প্রযোজ্য। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক $১ লাখ ফি দিতে হবে, এবং ৩ বছরের মেয়াদে মোট খরচ $৩ লাখ (প্রায় ২৬৪ লাখ টাকা) ছাড়িয়ে যেতে পারে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ফি $২,০০০ থেকে $৫,০০০ নির্ধারিত, যা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। হোয়াইট হাউসের ফ্যাক্ট শিট অনুযায়ী, বিদ্যমান H-1B হোল্ডারদের উপর নতুন ফি প্রযোজ্য নয়, তবে এন্ট্রি রেস্ট্রিকশন কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে প্রযোজ্য হতে পারে।

H-1B ভিসায় ফি হাইককে ট্রাম্পের অভিবাসন-বিরোধী এজেন্ডার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ২০২৪ নির্বাচনের পর থেকে আরও কঠোর হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৮৫,০০০ H-1B ভিসা ইস্যু হয়, যার ৭০% এর বেশি ভারতীয়। এই পরিবর্তন ভারতীয় আইটি কোম্পানি যেমন ইনফোসিস, টিসিএস, গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

H-1B ভিসার $১ লাখ বার্ষিক ফি বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১২ কোটি থেকে ১২.৫৮ কোটি টাকা।

এটি প্রতিবেদনে ভারতীয় রুপির রেফারেন্স অনুযায়ী কনভার্ট করা হয়েছে (৮৮ লাখ INR × ১.৪৩ ≈ ১২.৫৮ কোটি BDT) এবং USD থেকে সরাসরি হিসাব করলে ১ USD ≈ ১২০ BDT ধরে ১২ কোটি BDT হয়। বিনিময় হারের ওপর এটি সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।

ভারত সরকার এই ঘোষণাকে ‘চিন্তার কারণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। MEA-এর অফিসিয়াল স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে “বিভিন্ন পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং মানবিক সংকটময় পরিণতি তৈরি হতে পারে।” মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ভারতীয় শিল্পপতিদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটি উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। MEA আশা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে।

প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাস একটি ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স নম্বর চালু করেছে যাতে চিন্তিত পেশাজীবীরা সহায়তা পেতে পারেন। ঘোষণার পর ভারতে উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যারা নতুন H-1B ভিসার আবেদন করার পরিকল্পনা করছিলেন।

এই ফি বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় আইটি রপ্তানি শিল্পের জন্য “বিশাল ধাক্কা” আসতে পারে, কারণ কোম্পানিগুলো এখন নতুন ট্যালেন্ট আমদানি করতে ব্যয় বহন করতে হবে। NASSCOM-এর মতে, এটি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। তবে বিদ্যমান H-1B হোল্ডাররা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন, কারণ তাদের উপর নতুন ফি প্রযোজ্য নয় এবং তাদের US-এ ফিরে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।

H-1B ভিসার নতুন ফি বৃদ্ধির ফলে আবেদনকারীদের জন্য বার্ষিক খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে $১ লাখে পৌঁছেছে, যেখানে বর্তমান ফি মাত্র $২১৫-এর বেশি। নতুন ফি মূলত ২০২৫ থেকে প্রযোজ্য হবে এবং এতে মূলত নতুন আবেদনকারীরা, যাদের মধ্যে ৭০% এর বেশি ভারতীয়, প্রভাবিত হবেন।

নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ফি অপরিবর্তিত রয়েছে, যা $২,০০০ থেকে $৫,০০০ পর্যন্ত নির্ধারিত। এই পরিবর্তন প্রধানত বড় টেক কোম্পানি যেমন ইনফোসিস, টিসিএস ও অ্যামাজনকে প্রভাবিত করবে।

H-1B ভিসার মেয়াদও অপরিবর্তিত থেকে ৩ বছর। তবে বার্ষিক ফি বৃদ্ধির কারণে নতুন আবেদনকারীদের মোট খরচ প্রায় $৩ লাখে পৌঁছাবে, যা তাঁদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।