যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের যৌথ সামরিক অনুশীলন ‘রেড স্যান্ডস ২০২৫’

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা

বিশ্ব ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব যৌথভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ড্রোন-বিরোধী (কাউন্টার-ইউএএস) লাইভ-ফায়ার অনুশীলন ‘রেড স্যান্ডস ২০২৫’ (Red Sands 2025) শুরু করেছে।

সৌদি আরবের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শামাল-২ রেঞ্জে অনুষ্ঠিত এই অনুশীলন ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে।

USCENTCOM-এর অফিসিয়াল ঘোষণা অনুযায়ী, এই অনুশীলন আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার এবং ড্রোন যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে যৌথ প্রস্তুতি বৃদ্ধির জন্য পরিচালিত হয়েছে।

অনুশীলনের বিস্তারিত তথ্য

‘রেড স্যান্ডস ২০২৫’ অনুশীলনটি যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের সামরিক অংশীদারিত্বের অংশ, যা ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে। এবারকার অনুশীলনে ৩০০-এর বেশি আমেরিকান ও সৌদি সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন।

মোট ২০টি উন্নত কাউন্টার-ড্রোন (C-UAS) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মির মোবাইল লো, স্লো, আনম্যান্ড অ্যারক্রাফট ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স সিস্টেম (M-LIDS)।

অনুশীলনের মূল লক্ষ্য ছিল যৌথ ‘কিল চেইন’ (kill chain) তৈরি করা, যাতে ড্রোন সনাক্তকরণ থেকে ধ্বংসকরণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন,

“এটি শুধুমাত্র একটি টেকনিক্যাল ইভেন্ট নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীর অবস্থানের কৌশলগত পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”

অনুশীলন সৌদি আরবের রয়্যাল ল্যান্ড ফোর্স (RSLF) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের মধ্যে সমন্বয়ে পরিচালিত হয়েছে, যা দুই দেশের প্রযুক্তিগত এবং অপারেশনাল প্রস্তুতি বৃদ্ধি করেছে।

কৌশলগত গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সামরিক সহযোগিতা নতুন নয়। ১৯৫১ সাল থেকে চলমান USMTM মিশন সৌদি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহযোগিতা আরও গভীর হয়েছে, বিশেষ করে ড্রোন এবং অ্যাসিমেট্রিক যুদ্ধের হুমকির প্রেক্ষিতে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর উল্লেখযোগ্য অনুশীলন

২০২৪ – নেটিভ ফিউরি ২৪ (Native Fury 24): সৌদি আরব, UAE ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ লজিস্টিক্স অনুশীলন।

২০২৩ – ইগল রিসলভ: GCC দেশগুলোর সাথে যৌথ বহু-ক্ষেত্রীয় অনুশীলন।

২০২৪ মার্চ – রিয়াদের রেড স্যান্ডস ইন্টিগ্রেটেড এক্সপেরিমেন্টেশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো কাউন্টার-ড্রোন অনুশীলন।

এই অনুশীলনের কৌশলগত গুরুত্ব হলো ইরানের সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন আক্রমণের প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি। মধ্যপ্রাচ্যে সস্তা ও সহজলভ্য ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে, যা ইয়েমেন থেকে সৌদি অবকাঠামোতে হামলার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। অনুশীলনটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টিগ্রেটেড ডিটারেন্স’ কৌশলের অংশ, যা চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য।

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ ও সামরিক বিনিয়োগ

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী সামরিক বাজেটের ৫০% দেশীয়ভাবে ব্যয় করার লক্ষ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি যেমন বোয়িং ও লকহিড মার্টিন দেশটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। কংগ্রেসের FY ২০২৩ ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্টে প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটালিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সৌদিতে স্থায়ী অবস্থানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ২০ সেপ্টেম্বর খবরটি ভাইরাল হয়েছে। @Defence_Index-এর একটি পোস্টে বলা হয়,

BREAKING: United States and Saudi Arabia kick off joint military training exercises—strengthening ties and readiness in the region।”
অন্য পোস্টগুলো পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

আঞ্চলিক প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুশীলনটি GCC দেশগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতা বাড়াবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গাল্ফ অঞ্চলে উপস্থিতি শক্তিশালী করবে। তবে এটি ইরানের সাথে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যিনি ড্রোন প্রযুক্তি সরবরাহ করে। সৌদি আরবের চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অটুট রয়েছে।

‘রেড স্যান্ডস ২০২৫’ কেবল সামরিক অনুশীলন নয়, এটি দুই দেশের কূটনৈতিক বন্ধনকে আরও জোরদার করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব যৌথভাবে হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।

ভবিষ্যতে আরও বড় মাল্টিল্যাটারাল অনুশীলনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে অনুরূপ হতে পারে।