নির্মাণের দুই বছরেই বান্দরবান থানচি সড়ক ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত

শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তিতে; সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের অপেক্ষায় এলজিইডি

বান্দরবান থেকে অসীম রায় (অশ্বিনী): বান্দরবানের থানচি উপজেলার থানচি-বান্দরবান সড়কের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চেকপোস্ট থেকে বলিবাজার ও দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ দুটি পৃথক সড়ক বর্তমানে ভোগান্তির প্রতীক।

খানা খন্দে, কাঁদা মাটি ও অর্ধশতাধিক গর্তে ভরা এই সড়কগুলো প্রতিদিন শিক্ষার্থী, রোগী এবং সাধারণ মানুষকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রাখছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা কাঁদা মাটির কারণে স্কুলে পৌঁছে জুতা ধোয়ার জন্য বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়। অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ছোট যাত্রীবাহী যানবাহনও এই সড়কে চলাচলে কঠিন সমস্যার মুখে পড়ছে। একজন স্থানীয় অটোরিকশা চালক হাইহাইসিং বলেন, “আমি তিন বছর ধরে এই রাস্তায় গাড়ি চালাই। গাড়ির ব্রেক ও বিয়ারিং দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। সপ্তাহে দু’বারও পরিবর্তন করতে হয়। এই দুর্দশা থেকে আমরা মুক্তি চাই।”

ডা. মেথোয়াই মারমা, বলিবাজার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জানান, বান্দরবান জেলা সদর থেকে যাতায়াত কষ্টকর হলেও, এই সড়ক দিয়ে যাওয়া দ্বিগুণ কষ্টদায়ক। তিনি দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। সড়কসংলগ্ন বাসিন্দা ঙৈনুমং মারমা বলেন, “কাঁদা মাটি ও খানা খন্দে ভরা এই রাস্তা ছোট যানবাহন, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা প্রতিদিন পড়ে যায়। আমরা ভয়ে এই রাস্তা ব্যবহার করি।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭০ লাখ টাকার ব্যয়ে বিজিবি চেকপোস্ট থেকে বলিবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা ৪ ইঞ্চি আরসিসি ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঠিকাদার ছিলেন বিএনপি নেতা মংশৈম্রয় মারমা। তবে নির্মাণের মাত্র দুই বছর পেরোনোর পর সড়কটি এই ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে।

সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা জুন মাসে সড়কের পরিদর্শন করেছি। পূর্বে প্রস্তুতকৃত প্রাক্কলন নতুনভাবে সংশোধন করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এতে ৭ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাই এবং ১৭৫ মিমি, পরপর ১০ মিমি রড ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত। অনুমোদন পেলে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে এবং আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।”

তবে স্থানীয়রা সতর্ক করেছেন, সড়ক সংস্কার কাজ শুরু না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি। শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু না হলে মানবিক ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।