আইসিইউতে ভয়ংকর ছত্রাক: বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি
টুইট ডেস্ক : রাজধানীর একটি হাসপাতালে সুস্থ সন্তান প্রসব করেন এক মা। মায়ের অসুস্থতার কারণে নবজাতককে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে থাকা নবজাতকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ভয়ংকর ছত্রাক সংক্রমণে জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই নিভে যায় নবজাতকের জীবনপ্রদীপ। প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের শয্যা থেকেই ছত্রাক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে-এ তথ্য ছিল অনেকের কাছেই অজানা। দেশে এখনো হাসপাতালগুলোয় ছত্রাক সংক্রমণ শনাক্তের উন্নত ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এই সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, যা সেখানে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) প্রথমবারের মতো হাসপাতালভিত্তিক আক্রমণাত্মক ছত্রাক সংক্রমণের ওপর নজরদারি শুরু করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ঢাকার দুটি বড় হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে এ গবেষণা চলছে। গবেষকরা ৯৯২ জন রোগীকে চিহ্নিত করেছেন, যারা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে-প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু ও নবজাতক রোগীদের মধ্যে প্রাণঘাতী ছত্রাক সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে নিয়মিত নজরদারি না থাকায় এতদিন প্রাণসংহারী ছত্রাক শনাক্ত হয়নি। ক্যান্ডিডা অরিস এবং ক্যান্ডিডা ব্লাঙ্কি নামের দুটি ছত্রাক এখন ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। প্রচলিত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ফ্লুকোনাজোল ও ভোরিকোনাজোল কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ক্যাসপোফাঙ্গিন ও মাইকাফাঙ্গিনের মতো কিছু ব্যয়বহুল ওষুধ এখনো কার্যকর থাকলেও সহজলভ্য নয়।
সংক্রমণের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৩০ হাজার ১৭৮ জন দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি অ্যাসপারগিলোসিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৮০ শতাংশই যক্ষ্মা রোগী। ৯০ হাজারের বেশি মানুষ অ্যালার্জিক ব্রঙ্কোপালমোনারি অ্যাসপারগিলোসিসে ভোগেন। ক্যান্ডিডা ছত্রাকের মাধ্যমে রক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ১০০ জন, যা প্রতি লাখে পাঁচজনের সমান। এছাড়া ৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন আক্রমণাত্মক অ্যাসপারগিলোসিসে। দেশে ছত্রাক সংক্রমণের প্রধান কারণ ক্যান্ডিডা ব্লাঙ্কি, যা মোট সংক্রমণের ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী চিত্রও ভয়াবহ। প্রতি বছর প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ ছত্রাক সংক্রমণে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় সরাসরি ছত্রাক সংক্রমণের কারণে।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ড. তানজির আহমেদ শুভ বলেন, “দেশে এর আগে ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তাই এর ভয়াবহতা সম্পর্কেও ধারণা ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার মতো ছত্রাকও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। জরুরিভিত্তিতে সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে ছত্রাক শনাক্ত করে যুক্তিসংগতভাবে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারও কমাতে হবে, কারণ এটি ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সময়মতো শনাক্তকরণ এবং শক্তিশালী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলেই এ ভয়াবহতা কমানো সম্ভব।