মেক্সিকোর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি শেইনবাউম

মেক্সিকোতে ইতিহাস সৃষ্টি: শেইনবাউমের নেতৃত্বে গ্রিটো অনুষ্ঠান ও সামরিক পদযাত্রায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ় বার্তা।

বিশ্ব ডেস্ক: মেক্সিকোতে ২১৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী রাষ্ট্রপতি ক্লাউডিয়া শেইনবাউম নেতৃত্বে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হলো। এই বিশেষ দিনে তিনি দেশকে স্বাধিকার, সংহতি ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ় বার্তা প্রদান করেন।

শেইনবাউম সোমবার রাতে রাজধানী মেক্সিকো সিটির ন্যাশনাল প্যালেসের ব্যালকন থেকে ঐতিহ্যবাহী “গ্রিটো” অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানটি ১৮১০-২১ সালের স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার “সশস্ত্র আহ্বান”কে স্মরণ করে বেল বাজানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও স্বাধীনতা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬ সেপ্টেম্বর পালিত হয়, তবে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এর আগের রাতে “গ্রিটো” আয়োজন করা হয়ে আসছে।

মঙ্গলবার শেইনবাউম নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সামরিক পদযাত্রায় তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “কোনও বিদেশি শক্তি আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় না। আমাদের স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্বে কোনো হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়।” তাঁর এই মন্তব্যে কোন নির্দিষ্ট দেশকে উল্লেখ না করলেও এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর মাদকদ্রব্যের কার্টেল এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য চাপ বাড়াচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন আগেও প্রস্তাব দিয়েছিল যে, মার্কিন সৈন্যরা কার্টেলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। শেইনবাউম এসব প্রস্তাব স্থিরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তার প্রশাসন তার পূর্বসূরীর তুলনায় কার্টেল প্রতিরোধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে অনেক কার্টেল নেতাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ফেন্টানাইল বাজেয়াপ্তের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। শেইনবাউম বলেন, এই উদ্যোগগুলি মেক্সিকোর স্বার্থে নেওয়া হয়েছে, মার্কিন চাপের জবাবে নয়।

শহরের কেন্দ্রে জোকালো স্কোয়ারে হাজার হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তারা স্বাধীনতার গান, পতাকা উত্তোলন এবং নৃত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে এই দিন উদযাপন করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেইনবাউমের নেতৃত্বে এই উদযাপন মেক্সিকোর নারীর ক্ষমতায়ন, জাতীয় সংহতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংকেত হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পাঠানো হলো।

মেক্সিকোর স্বাধীনতা দিবস প্রতিটি বছর শুধু ইতিহাস স্মরণ নয়, বরং দেশের সামরিক শক্তি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় গৌরব উদযাপনেরও প্রতীক। শেইনবাউমের নেতৃত্বে এই উদযাপন নতুন এক অধ্যায় যোগ করেছে দেশটির ইতিহাসে, যেখানে নারীর নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক চাপের প্রতি দৃঢ় অবস্থান এবং জাতীয় স্বাধিকারকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।