ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানি জেনারেল নিহত

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ইরানি জেনারেল সাইয়েদ রাজি মুসাভি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক : ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দামেস্কের একটি এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন উচ্চপদস্থ ইরানের জেনারেল নিহত হয়েছেন।

ইরানের কর্মকর্তারা এবং ওই অঞ্চলের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়নি।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে সিরিয়ায় ইরানের আধাসামরিক বাহিনী রেভলুশনারি গার্ডের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা সাইয়েদ রাজি মুসাভিকে হত্যা করা হয়েছে। ‘ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো হামাসের সমর্থনে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে’।

লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত জুড়ে প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চলছে।

লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালায়।

ইরাকে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক নামে পরিচিত একটি গ্রুপের অধীনে কাজ করছে। ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে সমর্থন করায় প্রতিশোধ হিসেবে, ইরাক ও সিরিয়ায় আমেরিকান সেনাদের ঘাঁটিতে তারা ১০০ টিরও বেশি হামলা চালায়।

গ্রুপটি সোমবার ইরাকের উত্তরাঞ্চলের ইরবিলের বাণিজ্যিক বিমানবন্দরের পাশে একটি আমেরিকান ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমেরিকান সামরিক কর্মকর্তা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ডিসেম্বরের শুরুতে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই জেনারেল নিহত হন।

ইরানের অফিসিয়াল বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এবং বৃটেইনভিত্তিক বিরোধী দলের যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সোমবার ইসরায়েল শিয়া মুসলিমদের একটি মাজারের কাছে অবস্থিত সাইদা জেইনাব এলাকায় হামলা চালিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে
আমেরিকান ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসিম সোলাইমানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মুসাভিকে বর্ণনা করেছে আইআরএনএ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বা সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সোমবারের হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক বিবৃতিতে বলেন, সিরিয়ার পবিত্র মাজার রক্ষা এবং ইসলামি আদর্শ রক্ষায় প্রতিরোধ ফ্রন্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মুসাভি শহীদ হয়েছেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই এই অপরাধের জন্য মূল্য দিতে হবে।’

সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, মুসাভি ফরমাল মিলিটারি অ্যাডভাইজর হিসেবে সিরিয়ায় ছিলেন।

দামেস্ক থেকে আকবরি বলেন, ‘ইসরায়েল অবশ্যই সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিস্থিতিতে এই অপরাধের জবাব পাবে।’

আইআরএনএ এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মুসাভিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইরান ও রাশিয়ার পাশাপাশি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সিরিয়ার সংঘাতের সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভূমিকা পালন করেছে।

ইসরায়েল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শত শত হামলা চালায়। তারা সাধারণত সিরিয়ায় তাদের বিমান হামলার কথা স্বীকার করে না। ইসরায়েল বলছে, তারা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে টার্গেট করছে।