৭২ কেজি ওজন কমিয়ে ফিটনেস ট্রেইনার হলেন এমা
বৈজ্ঞানিক কৌশল, ধৈর্য ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে মানসিক রোগ জয় করে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠলেন এমা হুকারক।
টুইট ডেস্ক: ওজন কমানো শুধু শারীরিক ফিটনেসের পরীক্ষা নয়; এটি মানসিক স্বাস্থ্য, ধৈর্য ও জীবনধারার নিয়ন্ত্রণেরও পরীক্ষা। এমা হুকারক এই সত্য প্রমাণ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (ADHD) এবং বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার (BED)–এ ভুগেছেন।
এডিএইচডি হলো একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, যা ব্যক্তি মনোযোগ ধরে রাখতে, ইমপালস নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে নিয়মিত থাকতে অসুবিধা অনুভব করেন। বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার হলো এমন একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং খাবারের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।
এমা হুকারক ওজন কমানো নিয়ে যারা সমস্যায় ভুগছেন তাদের উদ্দেশে বলেন, “ব্যর্থতার কারণ সবসময় অলসতা নয়; বরং আপনার সমস্যা অনুযায়ী কোন পদ্ধতিতে এগোতে হবে, সেটা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি নিজ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বোঝাতে চেয়েছেন, ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকলে যেকোনো ওজন সমস্যা জয় করা সম্ভব।
এমা বলেন, শুরুতে তিনি নিজেকে অলস এবং ব্যর্থ মনে করতেন। তার ওজন কমানোর ব্যর্থতার মূল কারণ ছিল তার ADHD এবং বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার। এডিএইচডিতে আক্রান্তরা দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কাজের ওপর মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না এবং সহজে কোনো আসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এমার ক্ষেত্রেও খাবারের প্রতি আসক্তি সপ্তাহজুড়ে চলত।
পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন মানসিক রোগ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে। তিনি রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পর খাবার তালিকায় কৌশলগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন। দুই থেকে তিন পদ খাবার একবারে গ্রহণ এবং খাবারের সময় মনোযোগী থাকা শুরু করেন। এতে মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট কোনো খাবারের প্রতি আসক্ত হওয়ার সুযোগ পায় না। গবেষণা প্রমাণ করে যে, নিয়ন্ত্রিত খাবারের অভ্যাস বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
এমা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শুরু করেন। বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট কার্ডিও ও শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম ওজন কমানো, মেটাবলিজম উন্নত করা এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ADHD রোগীদের জন্য ধৈর্যশীল মনোবল ও স্ট্রাকচার্ড রুটিন অত্যন্ত কার্যকর। এমা ধৈর্য ও মনোবলের মাধ্যমে মনোযোগ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি ৭২ কেজি ওজন কমিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা স্থাপন করেছেন।
বর্তমানে এমা একজন ফিটনেস ট্রেইনার। তিনি বলেন, ডায়েটিং মানে শুধু স্লিম বা স্বাস্থ্যকর শরীর পাওয়ার উপায় নয়; এটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ, শেখা এবং ভালোবাসা শিখার এক যাত্রা। এখন তিনি কোনো কাজে থামতে বা ভালোবাসতে শিখেছেন, নিজেকে দোষী মনে না করেই অগ্রগতি করছেন।
এমা নেটিজেনদের উদ্দেশে বলেন, “ব্যর্থতার কারণ সবসময় অলসতা নয়; আপনার সমস্যা অনুযায়ী কোন পদ্ধতিতে এগোতে হবে তা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাদের জন্য আমার পরামর্শের দরজা সবসময় খোলা।”
তার গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এমার উদ্যম, ধৈর্য ও ইচ্ছাশক্তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বহু মানুষকে, যারা ওজন কমানো ও মানসিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক মানসিক স্বাস্থ্য চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধৈর্যশীল মনোবল একত্রিত হলে মানসিক ও শারীরিক রোগ জয় করা সম্ভব।