বান্দরবানে ১৭৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শূন্য

  • বান্দরবানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চরম শিক্ষক সংকট!
  •  ৪৩৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭৯টিতে প্রধান শিক্ষক শূন্য!
  •  সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ ৪২টি!
  •  রুমা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদমে সংকট প্রকট!
  •  অভিভাবকদের আশঙ্কা, শিক্ষার মান ভেঙে পড়ছে!

বান্দরবান প্রতি‌নি‌ধি: বান্দরবানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

জেলার ৪৩৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭৯টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকের ২০৩৯টি পদের মধ্যে ৪২টিও শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষকের সংকটে প্রশাসনিক জটিলতা

জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষকরাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একদিকে প্রশাসনিক কাজ, অন্যদিকে পাঠদান—দুই দায়িত্ব একসঙ্গে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এর ফলে পাঠদানের মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

রুমা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায় শিক্ষক সংকট সবচেয়ে প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। রুমা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরান জানান, তার উপজেলায় ৬৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৪টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।

একইভাবে আলীকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. কামাল হোসেন বলেন, উপজেলায় ৫০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯টিতে প্রধান শিক্ষক নেই।

দীর্ঘদিনের কাঠামোগত সমস্যা

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে বান্দরবানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ২১৯টি। বর্তমানে নতুন করে আরো ২১৬টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা সেই তুলনায় বাড়ানো হয়নি। জনবল কাঠামো এখনও আগের মতোই রয়েছে।

অভিভাবকদের উদ্বেগ

স্থানীয় অভিভাবক উক্যচিং মারমা ও সুমন ত্রিপুরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে শিক্ষক সংকট দেখা দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি অনিবার্য। তারা দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, “সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি ও ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা পরিষদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা থাকলেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা নেই। এজন্য বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে দুর্গম এলাকায় আবাসিক পদ্ধতিতে আরো ৪৮টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে।

জেলা পরিষদের পদক্ষেপ

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদের ন্যস্ত বিভাগ। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ৪২টি সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের ছাড়পত্র পেয়েছি। এ নিয়োগ দ্রুতই সম্পন্ন হবে। তবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণির পদ, তাই তা পিএসসির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”

শিক্ষা খাতে সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, সহকারী শিক্ষক পদ পূরণ এবং নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে বান্দরবানের মতো দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।