বান্দরবানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচাং পদ্ধতির সবজি চাষ

পাহাড়ি ঢালু জমিতেও চাষ সহজ ও ফলন বেশি হচ্ছে মাচাং পদ্ধতিতে।

অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় সম্প্রতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মাচাং’ পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এর ফলে খাড়া ও ঢালু জমিতেও কৃষকরা লাভজনকভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করতে পারছেন।

পাহাড়ি এলাকায় আগে কেবল সমান জমিতেই সবজি চাষ হত। ঢালু জমিতে সার দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো ও পরিচর্যা করা কঠিন হওয়ায় চাষীরা সীমিত পরিসরে কেবল নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেন। কিন্তু কৃষিজমি কমে আসা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন চাষিরা বাধ্য হয়ে নতুন পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন।

মাচাং পদ্ধতিতে বাঁশ, কাঠ বা দড়ির সাহায্যে মাচা তৈরি করা হয়। এই মাচার উপর তিতা করলা, শসা, চিচিঙ্গা, শিম, বরবটি ইত্যাদি চাষ করা হয়। নিচের অংশে অন্য সবজি লাগানো যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির কাছাকাছি থাকা ফসলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি হয়। মাচাং পদ্ধতিতে ফসল মাটির থেকে চার-পাঁচ ফুট দূরে থাকার কারণে এসব সমস্যা অনেক কমে আসে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ জানান, মাচাং পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন। “রোগবালাই কম হওয়ায় ফসলও বেশি হচ্ছে। তবে এই পদ্ধতির প্রচলন জেলায় অনেকদিন হয়নি,” তিনি বলেন।

সুয়ালক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, করলা, শসা, শিম, বরবটি ও মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকরা ব্যস্ত। মল্লিকা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মাচাং পদ্ধতিতে চাষ করে মে থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ৬০ মণ করলা ফলন পেয়েছেন। মণ প্রতি দাম দুই হাজার টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। অন্য কৃষকরা শসা, বরবটি ও শিম চাষ করে সন্তোষজনক ফলন পেয়েছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, চিম্বুক পাহাড়ের ৪০০ একর জমিতে বিভিন্ন মৌসুমী সবজি চাষ হচ্ছে। শসা, করলা, বরবটি ও শিমের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষও করা হচ্ছে। মে-জুনে বৃষ্টি শুরু হওয়া মাত্রই শসা রোপণ করা হয়, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করলা ফলন পাওয়া যায়।

মাচাং পদ্ধতির আরও সুবিধা হলো মাটি ক্ষয় কমানো এবং অতিবৃষ্টি বা ঝড়ের সময় ভূমিক্ষয় রোধে সহায়ক হওয়া। কৃষি বিভাগ নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে যাতে ঢালু জমিতেও সবজি চাষের সম্ভাবনা আরও বাড়ানো যায়।

ছোট খামার থেকে বড় পরিসর—সবাই মাচাং পদ্ধতিতে চাষ করে ফলন বাড়াতে পারছেন। কৃষকরা আশা করছেন, আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভজনক ফলন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।