লন্ডনে লাখো মানুষের বিক্ষোভ, ইলন মাস্কের সরকার পতনের আহ্বান

টুইট ডেস্ক: লন্ডনের অভিবাসনবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের সেন্ট্রাল এলাকায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা করেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক পদযাত্রায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। একই সময়ে অনুষ্ঠিত পাল্টা সমাবেশ ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’-এ প্রায় ৫ হাজার মানুষ যোগ দেন।

প্রাথমিকভাবে এই সমাবেশকে ‘বাকস্বাধীনতার উৎসব’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও এটি দ্রুত বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যে রূপ নেয়। পুলিশের ধারণার চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ সহিংসতার শিকার হয়। পুলিশের ওপর লাথি, ঘুষি, বোতল, ফ্লেয়ার ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, যার মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সমাবেশে যুক্ত হয়ে মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি রবিনসনসহ অন্যান্য কট্টর ডানপন্থি নেতাদের সমর্থন দেন এবং অভিযোগ করেন যে, ব্রিটিশ জনগণ এখন আর তাদের বাকস্বাধীনতা প্রয়োগে নিরাপদ বোধ করছেন না। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের ক্ষয় দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আগে এটি ধীর প্রক্রিয়ায় ঘটত, এখন ব্যাপক ও নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন এর ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করছে।’

সমাবেশে ফরাসি কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিবিদ এরিক জেমুরও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রতিস্থাপন ঘটছে। আমাদের প্রাক্তন উপনিবেশগুলো এখন আমাদেরকেই উপনিবেশে পরিণত করছে।’

বিক্ষোভকারীরা অভিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হোটেলের বাইরেও সমাবেশ করেন। তাদের হাতে ইউনিয়ন পতাকা, সেন্ট জর্জ ক্রস, মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা ছিল। অনেকেই মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ক্যাপ পড়ে ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন ‘ওদের বাড়ি ফেরত পাঠাও।’

সমাবেশে একটি গানও গাওয়া হয়, যার কথায় বলা হয়, ‘পশ্চিমকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো করে তোলা হচ্ছে।’ পরে মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট ও ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শিত হলে জনতা তা ছিঁড়ে ফেলে। রবিনসন মঞ্চে এসে ঘোষণা দেন, ‘ব্রিটেন অবশেষে জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন কখনো শেষ হবে না।’ তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের অনিয়ম উন্মোচনকারী সাংবাদিক দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।

সমাবেশে উপস্থিত এক সমর্থক সান্ড্রা মিচেল বলেন, ‘তাদেরকে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে।’ পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন বলেন, ‘ঘৃণার ধারণা আমাদের বিভক্ত করছে। আমরা যত বেশিমানুষকে স্বাগত জানাব, দেশ হিসেবে আমরা তত শক্তিশালী হব।’

রবিনসন, যার প্রকৃত নাম স্টিফেন ইয়াক্সলে-লেনন, মঞ্চে উঠে ঘোষণা দেন, ‘ব্রিটেন অবশেষে জেগে উঠেছে, এই আন্দোলন কোনোদিন শেষ হবে না।’ তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের অনিয়ম উন্মোচনকারী সাংবাদিক হিসেবে দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।

সমাবেশে যোগ দেওয়া এক সমর্থক সান্ড্রা মিচেল বলেন, ‘তাদেরকে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে।’ অন্যদিকে পাল্টা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষক বেন হেচিন মন্তব্য করেন, ‘ঘৃণার ধারণা আমাদের বিভক্ত করছে। আমরা যত বেশি মানুষকে স্বাগত জানাব, দেশ হিসেবে আমরা তত শক্তিশালী হব।’

উল্লেখ্য, অভিবাসন এখন ব্রিটেনের রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগকেও ছাপিয়ে গেছে এ বিতর্ক। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন, যা রেকর্ডসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।