বান্দরবানের ৮১ প্রকল্প বাতিল: প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ হতাশ।
উন্নয়নে আবারও পিছিয়ে পড়ছে বান্দরবান?
বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখনো বৃষ্টির দিনে হাঁটু-সমান কাদা মাড়িয়ে শিশুদের স্কুলে যেতে হয়। অসুস্থ রোগীকে নদী পেরিয়ে খাটিয়ায় করে উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে হয়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পাহাড়ি নারীদের কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়।
এই দীর্ঘদিনের দুর্দশা ঘোচাতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল মোট ৩৮১টি উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মধ্যে ৮১টি প্রকল্প বাতিল করেছে। ফলে হতাশা নেমে এসেছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে।
দারিদ্র্যের বেষ্টনীতে বান্দরবান
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচকে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জেলা হলো বান্দরবান। জেলার উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান, দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা, সীমিত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট মিলিয়ে বান্দরবান যেন এক অবহেলিত অধ্যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হলে এই বঞ্চনার চক্র থেকে মুক্তি মিলবে না।
কোন কোন প্রকল্প বাতিল হলো?
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—
শিক্ষা খাত: ৯টি প্রকল্প, ব্যয় প্রায় ৩ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্য খাত: ২টি প্রকল্প, ব্যয় ৩০ লাখ টাকা।
যোগাযোগ ও অবকাঠামো: ২৪টি প্রকল্প, ব্যয় ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
ধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি: ২৪টি প্রকল্প, ব্যয় ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
গৃহায়ণ ও সম্প্রদায় উন্নয়ন: ২০টি প্রকল্প, ব্যয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
জীবিকা উন্নয়ন: ২টি প্রকল্প, ব্যয় ৩০ লাখ টাকা।
মোট ৮১টি প্রকল্প বাতিল হওয়ায় পাহাড়ি জনগণের উন্নয়ন স্বপ্ন বড় ধাক্কা খেল।
থানচি উপজেলার বাসিন্দা হ্লামুই মারমা বলেন, “আমাদের গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ নেই। বৃষ্টি হলে নদী পার হয়ে স্কুলে যাওয়া যায় না। যোগাযোগ উন্নয়নের প্রকল্পই যদি বাতিল হয়, তাহলে আমাদের জীবন কি কখনো বদলাবে?”
রুমা উপজেলার এক তরুণী জানান, “স্বাস্থ্যকেন্দ্র এত দূরে যে সন্তান জন্মদানে অনেক নারী ঝুঁকিতে থাকেন। আমরা ভেবেছিলাম নতুন প্রকল্পে ক্লিনিক হবে, কিন্তু এখন জানলাম সেটাও বাতিল।”
বান্দরবান দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা বলেন, “অতীতে পাহাড়ের মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এখন আবার প্রকল্প বাতিল মানে নতুন প্রজন্মও একই বঞ্চনার শিকার হবে। সরকারের বিশেষ নজর দরকার।”
জেলা পরিষদের ব্যাখ্যা
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করি। মাঠ জরিপ করে প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের দিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে ৮১টি প্রকল্প বাদ পড়েছে। বাতিল না করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানিয়েছি।”
বিশেষ নজরের দাবি
স্থানীয়রা মনে করেন, বান্দরবানকে অবহেলা করলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সূচকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দারিদ্র্য হ্রাস ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বান্দরবানের প্রকল্প বাতিল পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।