৭২ ঘণ্টায় ৬ দেশে ইসরায়েলের হামলা, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, কাতার ও ইয়েমেনে ইসরায়েলের বিমান হামলা, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বৃদ্ধি। শতাধিক নিহত, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তীব্রতর

বিশ্ব ডেস্ক: গত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তিউনিশিয়া, লেবানন, কাতার ও ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন দেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার গাজা শহরে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৫০ জন নিহত ও ৫৪০ জন আহত হয়েছেন। বিমান হামলায় বিভিন্ন বেসামরিক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু ছিল। লেবাননের বেক্কা ও বারজা অঞ্চলেও হামলায় পাঁচজন নিহত হন, যার মধ্যে হিজবুল্লাহর একজন সৈন্য রয়েছেন।

সিরিয়ায় ইসরায়েলের আক্রমণ প্রধানত বিমানবাহিনী ঘাঁটি, মিলিটারি ব্যারাক ও বসতবাড়ির ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। হামলার ফলে সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিসেও হামলার খবর পাওয়া গেছে, যদিও হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

কাতারে মঙ্গলবার হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে ছয়জন নিহত হন, যার মধ্যে হামাসের সিনিয়র নেতা খলিল আল হায়ারের ছেলে, তিনজন দেহরক্ষী এবং কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়েছেন। আলোচনার টেবিলে থাকা নেতারা হামলা থেকে বেঁচে যান।

বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় দ্বিতীয়বার বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত ও ১৩১ জন আহত হয়েছেন। হুথি বিদ্রোহীরা হামলার দায় ইসরায়েলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এসেছে বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল-থানি ইসরায়েলের হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ আখ্যায়িত করেছেন এবং প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার হামলাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন।

লেবাননের হিজবুল্লাহও এই হামলাকে গাজা ও লেবাননের বিরুদ্ধে সম্প্রসারণমূলক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে কাতারের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইসরায়েলের হামলা আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। ইয়েমেন ও তিউনিশিয়ায় হামলার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হলেও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ কমেনি।

মধ্যপ্রাচ্যের এই ক্রমাগত উত্তেজনা এবং ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়াই উত্তেজনা কমানোর একমাত্র উপায়।