মহাদেবপুরে ভূয়া এফিডেফিট করে ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে দোকানঘর দখলের অভিযোগ
টুইট ডেস্ক: নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূয়া এফিডেফিট করে দোকান ঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকানঘরের মালিক আব্দুল মান্নান গতকাল বুধবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাহাদৎ হোসেন সদরের জাহাঙ্গীরপুর সরকারি মহিলা কলেজের নিকটে মো. আব্দুল মান্নানের একটি পাকা দোকানঘর ভাড়া নিয়ে স্ট্রেশনারী ব্যবসা করে আসছিলেন।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরপুর সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রী ওই দোকানে ফটোকপি করার জন্য গেলে দোকানে কেউ না থাকার সুযোগে শাহাদত হোসেন জোরপূর্বক ছাত্রীটিকে জড়িয়ে ধরে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলেও লোকলজ্জার ভয়ে ছাত্রীটির অভিভাবক আইনের আশ্রয় নেননি বলে জানান ওই কলেজের একাধিক শিক্ষক। এ বিষয়ে এলাকার সচেতন অভিভাবকসহ শিক্ষকমন্ডলী ওই স্থান থেকে অভিযুক্ত শাহাদৎ হোসেনকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে দোকান ঘরটি ভাড়া দেয়ার জন্য দোকান ঘরের মালিক আব্দুল মান্নানকে জানান। এতে করে ঘর মালিক আব্দুল মান্নান সমুদয় বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করে আগামী ১ মাসের মধ্যে দোকানঘর ছেড়ে দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে সাহাদৎকে জানান।
কিন্তু তাকে জানানোর মাস পার হয়ে গেলেও বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করা এবং দোকানঘর না ছাড়ায় তাকে দোকান ছাড়তে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এর এক পর্যায়ে গত কয়েকদিন আগে সাহাদৎ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সম্পদিত একটি ভূয়া এফিডেফিট উপস্থাপন করে করেন। সেখানে তিনি দোকানঘর মালিক আব্দুল মান্নানকে ১২ লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে দোকানঘরটি ভাড়া নিয়েছেন বলে জানান। তিনি জামানতের টাকা ফেরত পেলে দোকানঘর ছেড়ে দিবেন মালিককে জানান। এ ব্যাপারে পাশ্ববর্তী দোকানঘরের ভাড়াটিয়া স্টেশনারী ব্যবসায়ী মো. জাকারিয়া জানান, তিনি প্রায় ৪ বছর ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন। তার দোকান ঘরের জামানত ৫০ হাজার টাকা এবং ভাড়া ১৮০০ টাকা।
পাশের আরেক দোকানঘরের ভাড়াটিয়া আশিক হোসেন জানান, প্রায় তিন বছর তিনি সাবলেটে সাহদৎ হোসেনের দোকানঘরে ব্যবসা করেছেন। তার দোকানে অপ্রীতিকর ঘটনার পর তিনি সেখান থেকে চলে এসে পাশের অন্য একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, এর আগে ছোট পরিসরে দোকানঘর থাকায় ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়েছিল সাহাদৎ। প্রায় বছর খানেক আগে দোকানঘরটি বড় করে দেয়ায় দোকানঘর মালিককে আরো ১ লক্ষ টাকা জামানত দিয়েছেন। ১২ লক্ষ টাকা জামানত বা এফিডেফিটের ব্যাপারে এর আগে তারা কোনদিন শুনেননি বলে জানান। সে এখন পাশে যে দোকানঘর ভাড়া নিয়েছেন তার জামানত ৫০ হাজার টাকা ও ভাড়া ৩০০০ টাকা বলে জানান।
ভুক্তভোগী দোকানঘর মালিক আব্দুল মান্নান জানান, সাহাদৎ প্রায় ৬ বছর ধরে তার দোকানঘরটি ভাড়া নিয়ে আছেন। সে কখনোই নিয়মিত তার ঘরের ভাড়া পরিশোধ করেন না। এ কারণে বড় পরিসরে দোকানঘর ভাড়া দেয়ার পর পরীক্ষামূলক তাকে থাকতে দেয়া হয়েছে। এখনো তার কাছে ৬ মাসের ঘরভাড়া বকেয়া রয়েছে। পরে তার সাথে কোন চুক্তিনামাও করা হয়নি। এফিডেফিটের স্বাক্ষরও তার নয় বলে তিনি দাবী করেন। অভিযুক্ত সাহাদৎ হোসেন মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী জানান, যে নোটারি পাবলিকে এটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে ওই এ্যাডভোকেট আরো প্রায় ৫ বছর আগে তার এফিডেফিট করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এফিডেফিটটি ভূয়া। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মহাদেবপুর থানার ওসি মো. শাহীন রেজা বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।