পাঁচ দুর্বল ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণে সরকারের অনুমোদন

পাঁচ ইসলামী ধারার ব্যাংক একীভূতকরণে সরকারের অনুমোদন, ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন

টুইট প্রতিবেদন: বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের অনুমোদন পেয়েছে দেশের ইসলামী ধারার দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

সকল তথ্য অনুযায়ী, এই একীভূতকরণের জন্য মোট ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে। এছাড়া, আমানত বিমা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে এবং বাকি ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমানতকে শেয়ারে রূপান্তরিত করা হবে।

পাঁচটি ব্যাংক হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একিউআর (সম্পদের গুণগত মান যাচাই) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৮ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংক ৪৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে বাদ দিয়ে অপর পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত হতে সম্মত হয়েছে, তবে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কিছু সময় চেয়েছে।

ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ; আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না এবং ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি ক্রমবর্ধমান। গত মে পর্যন্ত মোট আমানত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা, যেখানে ঋণ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমাদের ৬ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের কাছে আছে। সময় ও মূলধন দিলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমরা একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছি, যা সংশোধন করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করব।’

একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এটি শুধু ওই ব্যাংকগুলোর জন্য নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যাতে আমানতকারীরা সুরক্ষিত থাকেন এবং আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।