দলীয় প্রধানের পদে না থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে না- মত বিশ্লেষকদের

টুইট ডেস্ক: দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বে না থাকলেও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা একটুও কমবে না বলে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে দলের মধ্যে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়তে পারে বলেও মত তাদের। যদিও মন্দের ভালো হিসেবে, এর মাধ্যমে দলের ভেতর গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শুদ্ধাচার বাড়বে বলে আশাবাদী তারা। আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়লে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ক্ষমতার কার্যকর ভারসাম্য হবে কি না, এ নিয়েও সন্দিহান তারা।

মূলত, সরকার পরিচালনায় নতুন করে আর কেউ যাতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে, শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা দূর করাই জুলাই সনদের লক্ষ্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দীর্ঘ সংলাপে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব- একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না। যদিও, এতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান আলাদা ব্যক্তি হলেও রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র বহাল থাকলে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় তেমন হেরফের হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে তা, দলে গণতন্ত্রের চর্চা ও নতুন নেতৃত্বের বিকাশে সহায়ক হবে বলেই মনে করেন তারা।

সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান না-ও হন, তবুও তার ক্ষমতা ও প্রভাব সামান্যতমও কমবে না। নিয়ন্ত্রণ আগের মতই থাকবে। যদি দলীয় প্রধানের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়, তাহলে ওই দলীয় প্রধানই হারিয়ে যাবেন; প্রধানমন্ত্রীর কিছুই হবে না।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) উপদেষ্টা ড. মির্জা এম হাসান মনে করেন, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা ব্যক্তি হলে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ খারাপ সম্পর্কের রেশ দল ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত গড়াতে পারে।

এদিকে, ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন। বেশিরভাগ দল একমত হলেও, এখানেও আপত্তি বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে আলাদা কমিটি গঠন, কিছু নিয়োগে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারের প্রস্তাব করেছে কমিশন। এতে, ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সামান্যই কমবে বলেই ধারণা অনেকের।

ড. মির্জা এম হাসান বলেন, দেশে রাজনৈতিক একটা সংস্কৃতি রয়েছে, যেখানে এর প্রভাব থেকেই যায়। যদি বিভিন্ন নতুন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি না কেন, দেশের প্রক্ষাপটে সরকার যা চায় সেটিই ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।

আব্দুল আউয়াল মজুমদারের মতে, রাষ্ট্রপতিকে যদি কিছু ক্ষমতাও দেয়া হয়, তিনি তো হবেন দলীয়ভাবে নির্বাচিত ব্যক্তি। তখন এমন কেউ-ই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকবেন, যিনি এই ক্ষমতা দেখাতে যাবেন না। এতে সার্বিকভাবে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।

উল্লেখ্য, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা-ঝুঁকি থাকলেও, পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে দলগুলোর ঐক্যের ওপরই জোর বিশ্লেষকদের।