নৌকার প্রার্থী কালামের মাইক্রো বাহিনীর ত্রাস, বাগমারাজুড়ে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদী বাংলাদেশ জেএমবির সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাস নিয়ে বাগমারায় ঘুরে বেড়িয়েছে এবং আওয়ামী লীগের লোকজনকে ধরে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিত। এক পর্যায়ে মাইক্রোবাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাগমারাজুড়ে। সে সময় মাইক্রোবাস দেখলেই অনেকেই পালিয়ে যেত।

প্রায় ২০ বছর পর সেই মাইক্রো আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাগমারাজুড়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংবদ নির্বাচন ঘরে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী সন্ত্রাসী বাহিনী এখন মাইক্রোবাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাগমারাজুড়ে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৎকালিন জেএমবির শীর্ষ নেতা তথাকথিত বাংলা ভাইয়ের অন্যতম সহযোগি আলমগীর সরকার। যার বাড়িতে বসে বাংলা ভাই মিটিং করে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

বাগমারা উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৪ আসন গঠনিত। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র। তিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বাগমারাজুড়ে। এছাড়াও গত ২ ডিসেম্বর আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার সমর্থক এক ইউপি চেয়ারম্যানকে সরাসরি হুমকি দিয়ে এলাকাবাসীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

আবুল কালাম এক সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২০০৭ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের সময় পালাতে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় কালাম। তবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পরও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছাড়তে পারেননি।

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী বাগমারাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কালামের অব্যাহত সন্ত্রাসের কারণে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে ভোটারদের মাঝে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কালাম বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে রাজশাহী শহরে অবস্থান করছেন।

কালামের সন্ত্রাসীরা এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের ২৩টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। উপজেলার ২৫ স্থানে কাঁচির কর্মীরা সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৪৫ জন নেতাকর্মী।

সর্বশেষ রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টানা তিনবারের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হকের প্রচার বহরে হামলা করে কালামের সন্ত্রাসী গ্রুপ। বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের নানসর মাদ্রাসা মোড়ে এ হামলায় এনামুল হকের দুই কর্মীর মাথা ফেটে যায়। এরা হলেন, হামলায় মো. সুইট (৩৫) ও মজিবর রহমান (৪০)।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, সোহরাব হোসেন তোতা, আব্দুর রাজ্জাক এবং ডাবলু মাস্টার। তারা সবাই নামসর গ্রামের বাসিন্দা এবং নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মী।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালি বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের পিএস আতাউর রহমান গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় কালামের সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাসে করে এসে অতর্কিত কাঁচি প্রতীকের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় আতাউরসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে আতাউর রহমানের হাত ও কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে তিনি চিকিৎসাধীন।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ভবানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনে ব্যাপক হামলা চালায় কালামের লোকজন। সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে থাকা স্বাধীনতার ইতিহাস সংবলিত চিত্রকর্মগুলো ভেঙে ফেলে। এদিকে শনিবার বাগমারার তাহেরপুর, গোয়ালকান্দি, শ্রীপুরসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও এনামুলের কাঁচি প্রতীকের পোস্টার নেই।

গত ২৩ ডিসেম্বর শনিবার রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ-সদস্য এনামুল হক সংবাদ সম্মেলন করে বাগমারায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কাঁচি প্রতীকের এ প্রার্থী অভিযোগ করেন, আমার নেতাকর্মীরা দিনের বেলায় পোস্টার লাগান। রাত নামলেই কালামের সন্ত্রাসী বাহিনী কাঁচির সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।

এনামুল হক এমপি বলেন, সন্ধ্যা নামলেই কালামের সন্ত্রাসীরা তিন-চারটা নম্বর প্লেটবিহীন মাইক্রোবাস নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টহলে বের হচ্ছে। এসব মাইক্রোবাসে আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা বলছে ভোট যেখানেই দাও, নৌকাই জিতবে।

এনামুল হক আরও বলেন, কালাম বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে টহলে বের হচ্ছেন কালামের স্ত্রী শায়লা পারভিন। আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সময় কালামের স্ত্রীও হামলায় অংশ নিচ্ছেন। আর গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মাইক্রোবাস টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, আমরাও শুনছি রাতে মাইক্রোবাসে করে সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে হুমকি-ধমকি এবং কোথাও কোথাও প্রতিদ্বদ্ধী প্রার্থীর পোস্টার তুলে ফেলছে। আমরা রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি বাড়িয়েছি। নির্বাচন কেন্দ্রিক কয়েকটি হামলার ঘটনাও ঘটেছে তিন-চারটি এলাকায়। কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

ওসি আরও বলেন, নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সংহিসতা নিয়ে থানায় সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। কোথাও কাউকেও পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হয়নি। আমার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। ভোটের মাঠে বাড়তি সুযোগ নিতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে।