বান্দরবানে ভাঙা সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল, গ্রামবাসীর দুর্ভোগ
ভাঙা সেতু দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত, গ্রামবাসীর দুর্ভোগ দীর্ঘছয় বছর
অসীম রায় (অশ্বিনী): বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ঝিরির ওপর নির্মিত সেতুটি প্রায় পাঁচ বছর আগে ধসে যাওয়ার পরও তা পুনঃনির্মাণ হয়নি। বর্তমানে সেতুর ধ্বংসাবশেষে বাঁশ ও গাছের খুঁটি বসিয়ে তৈরি করা অননুমোদিত সাঁকো দিয়ে স্থানীয়রা যাতায়াত করছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে, তবু গ্রামবাসীই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন এটি পার হয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বয়স্ক ও স্কুলগামী শিশুদের। উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে সেতুর পূর্ব অংশ ভেঙে যাওয়ার পর পাড়াবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে এই সাঁকো নির্মাণ করেছেন।
সুত্রের খবর অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নোয়াপতং ঝিরির ওপর আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় প্রবল স্রোতে সেতুর পূর্ব অংশ ভেঙে যায় এবং সংযোগ সড়কও ধসে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙা সেতুর কারণে ছোট-বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সেতুর ওপর দিয়ে সোনাই মারমা পাড়া, সোনাই সেপ্রু পাড়া, ছাপুসে পাড়া, সোনাই আগা পাড়া, নগুখং পাড়াসহ প্রায় হাজারো মানুষ চলাচল করতেন।
জামছড়ি জুনিয়র হাইস্কুল ও বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তিনা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “ছোটরা একা সাঁকো পার হতে পারে না। অন্যের সাহায্য নিতে হয়। বৃষ্টি বেশি হলে ঝিরির পানি বেড়ে যায়। অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হতে হয়।”
স্থানীয় অভিভাবক করুণারানী দাশ বলেন, “বর্ষার সময় প্রবল স্রোতে সাঁকোও ডুবে যায়। তখন সন্তানদের স্কুলে পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।”
মাহিন্দ্রা চালক অমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, “সেতুটি ভেঙে গেছে প্রায় পাঁচ বছর আগে। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি মাথায় বহন করে যাতায়াত করছেন। ফলে সময় নষ্ট হচ্ছে অনেক।”
নোয়াপতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চনুমং মার্মা বলেন, “বছরের পর বছর যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ৫-৬ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বান্দরবান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আতাউল রহমান বলেন, “১০০ মিটার দৈর্ঘ্যে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।”
গ্রামবাসীর ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়া এই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তারা প্রতিদিনই জীবনবন্দি সাঁকো পার হয়ে চলাচল চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।