পিত্তথলির পাথর: ঝুঁকি ও প্রতিরোধ

পিত্তথলির পাথর: বাংলাদেশে বাড়ছে রোগীদের সংখ্যা, সচেতনতা ও প্রতিরোধে জোর দিতে হবে!

টুইট ডেস্ক: পিত্তথলির পাথর বা গলব্লাডার স্টোন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বাংলাদেশে দ্রুত বাড়ছে।

সম্প্রতি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে একটি অল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ৩৮ বছর বয়সী এক পুরুষ রোগীর পিত্তথলিতে ২৪x১২ মিলিমিটারের একটি বড় পাথর ধরা পড়েছে, যা পিত্তথলির দেওয়ালকে পুরু করে দিয়েছে এবং পিছনের অংশে ছায়া তৈরি করেছে। রিপোর্টে এটিকে অ্যাকিউট ক্যালকুলাস কোলেসিসটাইটিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা এই রোগের একটি তীব্র রূপ।

এই কেসটি দেশে এই রোগের ব্যাপকতা এবং অবহেলার উদাহরণ। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণহীন থাকায় অনেকে এটিকে অবহেলা করেন, যা পরবর্তীতে জটিলতা বাড়ায়।

বাংলাদেশে পিত্তথলির পাথরের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুস্থ মানুষদের মধ্যে এই রোগের প্রিভেলেন্স ৬%।

গ্রামীণ এলাকায় এটি আরও বেশি, যেখানে সামগ্রিক প্রিভেলেন্স ১৪.৪%, যার মধ্যে একক পাথর ৮%, একাধিক পাথর ৩.২%, এবং অস্ত্রোপচারের কেস ৩.২%।

একটি মাল্টি-সেন্টার স্টাডিতে দেখা গেছে, রোগীদের ৪৪.৩৮% পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, যা সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, এবং ২০.৭১% বমি করে।

যুবকদের মধ্যে নারীদের মধ্যে প্রিভেলেন্স ৫৮.৮%, যা পুরুষদের (৪১.২%) চেয়ে বেশি।

এছাড়া, দেশের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের মধ্যে এটি একটি প্রধান সমস্যা, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করছে।

পিত্তথলির পাথরের প্রধান কারণ হলো পিত্তরসে কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিনের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে যাওয়া, যার ফলে পিত্তরস ঘন হয়ে জমাট বাঁধে।

পিত্তথলি সঠিকভাবে খালি না হলে এই সমস্যা বাড়ে। ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা (বিএমআই >২৫ কেজি/মি²), সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, দীর্ঘকাল না খাওয়া, এবং ৪০ বছরের বেশি বয়স।

নারীদের মধ্যে গর্ভাবস্থা এবং হরমোনাল পরিবর্তন এটি বাড়ায়। বাংলাদেশে শারীরিক পরিশ্রম কম এবং চর্বিযুক্ত খাবারের প্রচলন এই রোগের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

এই রোগকে ‘নীরব রোগ’ বলা হয়, কারণ প্রথমে লক্ষণ দেখা যায় না।

তবে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা, বমি, জ্বর, হজমের সমস্যা বা চামড়ায় হলুদ ভাব দেখা যায়।

রাজশাহীর কেসের মতো, যেখানে পিত্তথলি ফুলে গিয়ে আশেপাশের অংশে আঠালো হয়েছে, এটি তীব্র রূপ নিতে পারে।
চিকিৎসায় প্রধানত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিত্তথলি অপসারণ করা হয়, যা ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটোমি নামে পরিচিত এবং নিরাপদ।

ওষুধ দিয়ে (যেমন বাইল সল্ট থেরাপি) চিকিৎসায় সাকসেস রেট ৫০% এর কম এবং ৬ মাসের বেশি সময় লাগে। লক্ষণহীন কেসে শুধু পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট। প্রতিরোধে সুষম খাদ্য, নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, চর্বি কম খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।

চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় জটিলতা বাড়তে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দীন খান বলেন, “সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সচেতনতা বাড়ানো দরকার।”

বাংলাদেশে এই রোগের বৃদ্ধি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানোর দাবি উঠছে। আরও তথ্যের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

(সূত্র: NCBI, ResearchGate, Cleveland Clinic, Mayo Clinic এবং স্থানীয় হাসপাতাল রিপোর্ট)