ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণে রাজনৈতিক প্রভাব
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রাজনৈতিক: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হুমকি
বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরেই খেলাপি ঋণের বোঝায় জর্জরিত। এটি কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়; বরং রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা এবং সাধারণ আমানতকারীকে প্রভাবিত করছে, যা সার্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক আশ্রয় ও ঋণগ্রহীতার দায়মুক্তি
খেলাপি ঋণ তৈরি হয় প্রভাবশালী মহলের রাজনৈতিক সহায়তায়। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে ঋণগ্রহীতা দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, ফলে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বৈষম্যের শিকার হয়। এটি অর্থনীতিতে অন্যায় লেনদেনের সংস্কৃতি তৈরি করে।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক অর্থায়ন
খেলাপি ঋণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর নির্বাচনভিত্তিক প্রভাব। নির্বাচনের সময় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রাজনৈতিক দলের কাছে অর্থায়ন দেয়। ক্ষমতায় এলে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ বা আইনি সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংক খাত রাজনৈতিক লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও জনগণের ঝুঁকি
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়। জনপ্রিয় প্রকল্পে অর্থায়ন বা প্রভাবশালী মহলের সুবিধার্থে ব্যাংকের সম্পদ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিতে পড়ে এবং রাষ্ট্রকে পুনঃপুঁজি যোগাতে হয়।
অর্থনীতির ওপর প্রভাব
খেলাপি ঋণ অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট, বিনিয়োগে ধীরগতি, নতুন উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিতকরণ এবং সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক খাত সরকারের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
খেলাপি ঋণ কেবল আর্থিক শৃঙ্খলার ভাঙন নয়; এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন। আইন কঠোর হলেও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে সুস্থ ও স্বচ্ছ রাখতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নীতি প্রণয়ন এবং দায়িত্বশীল ঋণনীতি জরুরি।