ড. ইউনূসের প্রভাবে মার্কিন শুল্কে বিশেষ সুবিধা

টুইট প্রতি‌বেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুনাম ও ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়েছে।

শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকায় আয়োজিত ‘মার্কিন শুল্ক: বাংলাদেশের অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় সেটি ফল দিয়েছে।

প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। তবে টানা আলোচনার পর ৩১ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন হার কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসে এবং তা কার্যকর হয় ১ আগস্ট থেকে। যদিও অতিরিক্ত এই শুল্কের সঙ্গে বিদ্যমান গড় শুল্ক যোগ হওয়ায় কার্যকর হার এখনও প্রায় ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে বলে শিল্পমহল মনে করছে।

এ কারণে প্রতিযোগিতামূলক দামে টিকে থাকতে পোশাক খাতকে নতুন কৌশল নিতে হচ্ছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয় মাথায় রেখেই দরকষাকষি করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকার শুল্ক আরও কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নতুন এই শুল্ক সুবিধা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি ২.৩ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে দুই দেশের পণ্যবাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৭ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় শুল্ক সুবিধা পাওয়া মানে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবাহ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

তবে কার্যকর শুল্কহার ৩০ শতাংশের বেশি থাকায় পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিল্পমহল মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষত পোশাক রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে হলে মার্কিন কাঁচামাল—বিশেষত তুলা—ব্যবহারের শর্তকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ অন্তত ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করলে পাল্টা শুল্ক থেকে আংশিক ছাড় পাওয়া সম্ভব।

এছাড়া উচ্চমূল্য সংযোজন ও সিনথেটিক/পারফরম্যান্স ফ্যাব্রিক রপ্তানিতে নজর দিলে ঝুঁকি কমানো যাবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পোশাক রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আরএমজি রপ্তানি হয়েছে ১০.৩ বিলিয়ন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৩৪ শতাংশ বেশি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত রপ্তানি ২১ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যাবে। তাই শিল্প ও সরকারকে যৌথভাবে নতুন বাজার তৈরি, সোর্সিং বহুমুখীকরণ এবং ‘রুল অব অরিজিন’-ভিত্তিক ছাড় আদায়ের কৌশল নিতে হবে।

সব মিলিয়ে ড. ইউনূসের প্রভাবে আনা এই সুবিধা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তবে সামনে আরও কার্যকর নীতি-সহায়তা ও কৌশল গ্রহণ করাই হবে টেকসই সমাধান।