চতুর্থ ইকোনোমিক জোন পাচ্ছে মেঘনা গ্রুপ

সংগ্রহীত

টুইট ডেস্ক : মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ চতুর্থ ইকোনোমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) পেতে যাচ্ছে, যা দেশীয় গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।ইকোনমিক জোনে নতুন করে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছেন মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তারা।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে প্রাক-যোগ্যতা সনদের চুক্তি সই করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

বর্তমানে মেঘনা গ্রুপের অধীনে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এরমধ্যে “মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন (মিজ)” এবং “মেঘনা ইকোনমিক জোনে (মেজ)” উৎপাদিত হচ্ছে দেশি-বিদেশি শিল্প পণ্য এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে “কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিইজেড)।”

এই তিনটি ইকনোমিক জোনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপ এবার নতুন করে প্রাক-যোগ্যতা সনদ পেতে যাচ্ছে একই গ্রুপের তিতাস ইকোনমিক জোন (টিইজেড)।

চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে মোট ৮টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল বর্তমানে বেজার অধীনে বাণিজ্যিক উৎপাদন চালাচ্ছে।

ইতিমধ্যে সিটি গ্রুপের দুই অর্থনৈতিক অঞ্চল– ‘সিটি ইকোনমিক জোন’ এবং ‘হোশেন্দি ইকোনমিক জোনে’ পণ্য তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, আবদুল মোনেম লিমিটেডের আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোন, বে গ্রুপের বে ইকোনমিক জোন, আমান গ্রুপের আমান ইকোনমিক জোন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েস্ট স্পেশাল ইকোনমিক জোনও পণ্য উৎপাদনে করছে।

লাইসেন্স প্রাপ্ত আরও তিনটি জোন-‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’, ‘কিশোরগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ এবং ‘কর্ণফুলী ড্রাই ডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)’-বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “প্রাক-যোগ্যতাপত্র দেওয়ার পর আবকাঠামো উন্নয়নসহ কিছু কাজের শর্ত দেওয়া থাকে। পরবর্তীতে আমরা জোন পরিদর্শন করে যদি দেখি শর্তগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, তাহলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বেজা গভর্নিং বোর্ডে পাঠাই। বেজা গভর্নিং বোর্ডে অনুমোদন দিলে চূডান্তভাবে এটা অনুমোদন হয়। এরপর বিনিয়োগকারীদের জায়গা বরাদ্দ দিতে পারেন তারা।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে ১২টি; যেখানে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।”

‘কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গায় মেঘনা নদীর তীরে আনুমানিক ৪০০ একর জমিতে গড়ে উঠছে তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চল (টিইজেড)। উন্নয়নের প্রথম ধাপে ১৬১ একর জমিতে দেশি-বিদেশি শিল্প স্থাপনের ওপর নজর দেওয়া হবে; পরিকল্পিত পুরো ৪০০ একরের সম্প্রসারণ হবে নিকট ভবিষ্যতে।’

মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, অঞ্চলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি অবস্থিত, একইসঙ্গে এখানে নদী সুবিধাও রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টিইজেড লাভজনক অবস্থানে আছে। অঞ্চলটি ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ২১০ কিলোমিটার এবং কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

টিইজেড- এ ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় মেঘনা গ্রুপ
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুমন ভৌমিক টিবিএসকে বলেন, “আমাদের গ্রুপ এর আগে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এখন আমরা ‘‘টিইজেড’’-এর জন্য একটি প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স পেতে যাচ্ছি। পুরো অঞ্চলে শিল্প স্থাপিত হওয়ার মাধ্যমে এতে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৬০,০০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

মেঘনা গ্রুপকে দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্পোরেট ও শিল্প গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশে প্রযুক্তি স্থানান্তরের পাশপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়নে টিইজেড- এর বিকাশ ও পরিচালনা করতে যাচ্ছে মেঘনা গ্রুপ।’

সুমন ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ক্ষেত্রে মেঘনা গ্রুপ অগ্রগামী। কারণ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, উন্নয়ন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা রয়েছে মেঘনা গ্রুপের।’

টিইজেড বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখবে। একইসঙ্গে অঞ্চলটিতে একটি পাওয়ার সাব-স্টেশন, সিইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার), সিএসটিপি (সাধারণ নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি) এবং ফায়ার সার্ভিস সুবিধাও থাকবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বাণিজ্যিক ‘ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, হেলিপ্যাড সুবিধা, মসজিদ, চিকিৎসা কেন্দ্রসহ’ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে সেখানে।

‘টিইজেডের কাছাকাছি নদী থাকায় এখানে পেট্রোকেমিক্যাল শোধনাগার, কাগজ ও বোর্ড মিল, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি পণ্য, পিভিসি, পাওয়ার প্ল্যান্ট, এলপিজি, গার্মেন্টস, প্রসাধনী, রাসায়নিক, কৃষিভিত্তিক, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক-সম্পর্কিত পণ্য, সরঞ্জাম, প্যাকেজিং এবং ইস্পাত পণ্যসহ বেশকিছু ভারী শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তারা।’

সুমন ভৌমিক বলেন, ‘এমআইইজেডে বিদেশি বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে বেশি। বেশকিছু বিদেশি বিনিয়োগ পাইপলাইনে রয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ থাকলেও বিনিয়োগকারীরা জাতীয় নির্বাচনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’