মার্জিন ঋণ পেতে বিনিয়োগে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা বাধ্যতামূলক

মার্জিন ঋণ বিধিমালা-২০২৫ : ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছাড়া ঋণ নয়

টু্ইট ডেস্ক: শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে বিনিয়োগকারীর নিজস্ব বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার কম হলে তিনি আর মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত “মার্জিন ঋণ বিধিমালা-২০২৫” খসড়ায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো—নিজস্ব বিনিয়োগ কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা থাকা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকা এবং বিনিয়োগকারীর নিয়মিত আয়ের উৎস থাকা।

খসড়ায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১০ লাখ টাকার কম হলে সেই টাকার অর্ধেক পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাবে। আর ১০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে সমপরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়া যাবে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি বা ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারবে না।

এ বিধিমালার অন্যতম নতুন দিক হলো—দরপতনের সময় বিনিয়োগকারীদের কিছু না কিছু মূলধন ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। অনেকেই তাদের মূলধনের কিছুই ফেরত পাননি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার নতুন বিধিমালায় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যেসব বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মার্জিন ঋণ নিয়েছেন, তাদের এক বছরের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা করতে হবে। তা না হলে তাদের মার্জিন অ্যাকাউন্টের সব শেয়ার বিক্রি করে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ফোর্স সেল সংক্রান্ত বিধান

বিএসইসির প্রস্তাবিত খসড়ায় “ফোর্স সেল” বিষয়ে বিশেষ ধারা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো মার্জিন অ্যাকাউন্টের পোর্টফোলিও মূল্য প্রদত্ত ঋণের ১৫০ শতাংশে নেমে আসে, তবে নোটিশ প্রদান ছাড়াই প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করবে। আর পোর্টফোলিও মূল্য ঋণের ১৭৫ শতাংশে নেমে এলে বিনিয়োগকারীকে ৭ দিনের মধ্যে মার্জিন সমন্বয় করতে তিনটি আলাদা নোটিশ পাঠাতে হবে।

যদি কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী ফোর্স সেল কার্যকর না করে, তবে শেয়ারদর আরও কমে গেলে বিনিয়োগকারীর অতিরিক্ত ক্ষতির দায়ভার প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে।

সর্বোচ্চ ঋণ অনুপাত

খসড়ায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী নিজে যত অর্থ মার্জিন অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করবেন, সর্বোচ্চ সেই পরিমাণ অর্থই ঋণ নিতে পারবেন। অর্থাৎ ঋণ ও মূলধনের অনুপাত হবে সর্বোচ্চ ১:১।

মতামত আহ্বান

বিএসইসি এই খসড়া বিধিমালা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ডাকযোগে বা ইমেইলে মতামত পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে বিধানটি চূড়ান্ত করা হবে।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়বদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। তাদের মতে, এতে একদিকে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়বে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।