গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করে অফিসে বিএফআইইউ প্রধান

ছবি: সংগ্রহিত

গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করে অফিসে বিএফআইইউ প্রধান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অস্থিরতা

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামকে ঘিরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গভর্নরের নির্দেশে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলেও শাহীনুল ইসলাম সেই নির্দেশ অমান্য করে আজ বুধবার অফিস করেছেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

বাধ্যতামূলক ছুটির আইনি ভিত্তি

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স, ১৯৭২ অনুসারে গভর্নরের হাতে সকল প্রশাসনিক ও শৃঙ্খলাবিষয়ক ক্ষমতা ন্যস্ত। কোনো কর্মকর্তা গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হলে তাকে তদন্তের স্বার্থে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখাই বাধ্যতামূলক ছুটি। এটি কোনো শাস্তি নয়, বরং তদন্ত নিরপেক্ষ রাখার অংশ।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৩ এও স্পষ্ট বলা আছে যে, অভিযোগ তদন্তাধীন থাকলে কোনো সরকারি কর্মচারীকে “সাময়িক বরখাস্ত” বা “বাধ্যতামূলক ছুটি” দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মসংস্থান নীতিমালাতেও একই বিধান রয়েছে।

সূত্র:The Bangladesh Bank Order, 1972 (President’s Order No. 127 of 1972)
The Government Service Act, 2018 (Act No. 57 of 2018)
Bangladesh Bank (Employees’ Service) Regulations, 2014

তদন্তাধীন কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ

শাহীনুল ইসলাম গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করে অফিস করায় বিষয়টি এখন প্রশাসনিক অপরাধের পর্যায়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স, ১৯৭২ এর ধারা ১৮(৩) অনুসারে গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক সাসপেনশন কিংবা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

গভর্নরের অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর মঙ্গলবার স্পষ্ট করে বলেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ প্রধানকে ছুটিতে থাকতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অস্থিরতা

এ ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। একাংশ কর্মকর্তা অবিলম্বে শাহীনুলকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাদের মতে, তদন্তাধীন অবস্থায় অফিস করলে সংস্থার ভাবমূর্তি আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

আপত্তিকর ভিডিওর সত্যতা

যদিও শাহীনুল ইসলাম ভিডিওটিকে ভুয়া দাবি করেছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি আসল বলে ধারণা করছে। যদি তদন্তে ভিডিওর সত্যতা প্রমাণিত হয়, তবে তিনি শুধু প্রশাসনিক অপরাধেই নয়, নৈতিকতা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শর্ত ভঙ্গ করায় পদ থেকে অপসারিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

সম্ভাব্য পরবর্তী ব্যবস্থা

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় তিনটি সম্ভাবনা সামনে আসতে পারে—
১. তদন্ত চলাকালে তাকে আবারও অফিস থেকে সরিয়ে বাধ্যতামূলক ছুটি কার্যকর করা।
২. শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রশাসনিক সাসপেনশন দেওয়া।
৩. তদন্তে প্রমাণিত হলে স্থায়ীভাবে পদচ্যুত করা।

সব মিলিয়ে, গভর্নরের নির্দেশ অমান্য করে অফিসে যোগ দেওয়া শুধু প্রশাসনিক শৃঙ্খলাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তিতেও বড় ধাক্কা দিয়েছে।