ময়মনসিংহে ভোটের মাঠে জনতার সাড়া

ময়মনসিংহের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ আসন: নির্বাচনী মাঠে সরগরম, ভোটারের দুয়ারে ছুটছেন প্রার্থীরা

টুইট প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সরব হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের রাজনীতির মাঠ। জেলার ১১টি আসনের মধ্যে এবার আলোচনায় রয়েছে জেলার পাঁচটি আসন— ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর), ময়মনসিংহ-৪ (সদর), ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা), ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) এবং ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের নির্বাচনী চিত্র প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে।

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)

এই আসনটি একক উপজেলা ভিত্তিক। বর্তমানে বিএনপির মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট নূরুল হক, যিনি দুঃসময়ে দলের হয়ে আন্দোলন করেছেন এবং আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ।

তবে স্থানীয় বিএনপির একাংশের অভিযোগ, ইকবাল দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং একসময় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বহিষ্কৃতও হয়েছিলেন। অন্যদিকে হিরণের বিরুদ্ধে নিজ দলের কর্মীদের ওপর হামলা ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই উপজেলা আমির মাওলানা বদরুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি ইতোমধ্যে মাঠে গণসংযোগে নেমেছেন।

ময়মনসিংহ-৪ (সদর)

আওয়ামী লীগের ভোট কোনদিকে যাবে— এই প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন (যদিও তার প্রার্থিতা এখনো অনিশ্চিত), দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন এবং মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান খান।

এই আসনে প্রার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিএনপির ঐক্য ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে জামায়াত সুসংগঠিতভাবে নগর এলাকায় প্রচারে সক্রিয় হয়েছে। মহানগর আমির কামরুল আহসান এমরুলের নেতৃত্বে কর্মিসম্মেলন, সাংগঠনিক বৈঠক এবং ধারাবাহিক কর্মসূচি চালাচ্ছে দলটি। বাকৃবি ও মেডিকেল কলেজের তরুণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা ‘আদর্শিক নেতৃত্ব’ ও ‘ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রের দর্শন’ তুলে ধরছে।

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা)

এ আসনে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় পার্টি সক্রিয়। বিএনপির মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুন।

বাবলু দুঃসময়ে দলের পাশে থেকেছেন, করোনাকালে মানবিক সহায়তা দিয়েছেন। রাকিব রাজপথের আন্দোলনে পরীক্ষিত তরুণ নেতা হিসেবে পরিচিত। আর জাকারিয়া হারুন অতীতে আওয়ামী লীগের শাসনকালেও জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

অন্যদিকে জামায়াতের অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। খেলাফত মজলিস থেকে মুফতি হাবিবুর রহমান মাঠে রয়েছেন। তবে আওয়ামী প্রভাব না থাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তির খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া)

ফুলবাড়ীয়ায় প্রার্থীরা ব্যস্ত ভোটের মাঠে। বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক, ছাত্রদল-যুবদল হয়ে উঠে আসা নেতা মো. আব্দুল করিম সরকার, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ মামুন, প্রয়াত এমপি শামছউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রানা, অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ডা. সাইফুল ইসলাম বাদল এবং ব্রিগেডিয়ার মনিরুল ইসলাম আখন্দ মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তবে স্থানীয় বিএনপির একাংশ সংগঠনের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আহ্বায়ক ফারুকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দখলবাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে।

অন্যদিকে জামায়াত ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে— অধ্যক্ষ মো. কামরুল হাসান মিলন। তার নেতৃত্বে মাঠে সংগঠিতভাবে এগোচ্ছে দলটি।

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল)

এ আসনে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। লিটন ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং দলের দুঃসময়ে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। জয়নাল আবেদীনও জনপ্রিয় স্থানীয় নেতা।

অন্যদিকে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে— মহানগরের নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেলকে। ইসলামী আন্দোলন থেকেও প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ।

স্থানীয়দের মতে, বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা তীব্র। তবে লিটনের দীর্ঘ রাজনৈতিক ত্যাগ ও জনপ্রিয়তার কারণে তার সম্ভাবনা বেশি।

ময়মনসিংহের পাঁচটি আসনেই বিএনপি শক্তভাবে মাঠে রয়েছে। প্রার্থী নিয়ে ভেতরে কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ময়মনসিংহের পাঁচটি আসনেই বিএনপি ও জামায়াত সক্রিয়ভাবে ভোটের মাঠে অবস্থান করছে। প্রতিটি আসনে বিএনপির ভেতরে প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থাকলেও জামায়াত বেশ সংগঠিতভাবে মাঠে আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার ভোটাররা যে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন— এমন প্রত্যাশা থেকেই নির্বাচনী মাঠ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।