রাজশাহীতে সুদের জালে জর্জরিত ফজলু, শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ফিরলেন গ্রামে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণের টাকা আর সুদের বোঝা সহ্য করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে পালিয়ে গিয়েছিলেন ফজলুর রহমান ফজলু (৫৫)। সেখানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও শেষ পর্যন্ত গ্রামে ফিরে লাশ হয়ে ফিরলেন তিনি। রাজশাহীর মোহনপুরে সুদখোর ধুলু মিয়ার বিরুদ্ধে তাঁকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গুরুতর আহত ফজলুকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুশয্যায় স্বজনদের কাছে ধুলু মিয়ার নাম বলে যান ফজলু। ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধুলুকে গ্রেপ্তার করে।
নিহতের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবির দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ২০২২ সালে ধুলুর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ফজলু। এর বিপরীতে ৪৩ হাজার টাকা সুদও শোধ দেন তিনি। কিন্তু ধুলু আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে গ্রামে সালিস বসে ১৫ হাজার টাকায় মীমাংসা হলেও ধুলু তা মানেননি। এরপর থেকেই তিনি ফজলুর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং নানা হুমকি দিতে থাকেন।
হুমকির ভয়ে ফজলু পরিবার নিয়ে রাজশাহী শহরে চলে যান এবং রিকশা চালাতে থাকেন। মাঝে মাঝে গ্রামে ফিরলেও নিয়মিত থাকা সম্ভব হয়নি। গত ১৪ আগস্ট রাতে গ্রামে ফেরার পথে তাঁকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তখন তাঁর মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল এবং গন্ধ আসছিল বিষের। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে বড় ছেলে শাহ আলমকে ফজলু জানান, ধুলুসহ কয়েকজন মিলে তাঁকে বেঁধে মারধর করেছে এবং মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে।
নিহতের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবি বলেন, “আমার স্বামী অনেক দিন ধরেই ধুলুর ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারতেন না। গত কোরবানির ঈদের আগে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ধুলু টাকা নেয়নি, উল্টো হুমকি দিয়েছে। এখন আমার স্বামী লাশ হয়ে ফিরেছে। আমার ঘরে চুলায় ভাতও ওঠে না। আমি চাই, যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তাদের কঠিন শাস্তি হোক।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার সরদার জানান, ফজলু আলু চাষের জন্য ধুলুর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সালিসে মীমাংসার চেষ্টা হলেও ধুলু তা মানেননি। মৃত্যুর আগে ফজলু ভিডিওতেও ধুলুর নাম বলে গেছেন।
মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, “ফজলুর মৃত্যুর আগে দেওয়া ভিডিওতে ধুলুর নাম উঠে এসেছে। মামলার পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ।”