সাবেক আইজিপি পাটোয়ারীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ৭ জনকে হত্যা
টুইট ডেস্ক: গাজীপুরে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডকে প্রসিকিউশন পক্ষ “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়াবহ নজির” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন গাজী এমএইচ তামিম। উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও মিজানুল ইসলামসহ অন্যরা।
২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাতজন যুবককে আটক করা হয়। এরা ছিলেন মাদরাসা ছাত্র বা ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সাধারণ তরুণ। তাদের মধ্যে যাত্রাবাড়ীর ১৯ বছর বয়সী ছাত্র ইবরাহীমও ছিলেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটক সাতজনকে গাজীপুরের জয়দেবপুরের একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাইরে তালা লাগিয়ে বাড়িটিকে “জঙ্গি আস্তানা” সাজানো হয়। সেদিন সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সরাসরি গুলি চালায় এবং সাতজনকেই হত্যা করে।
ঘটনার পর নিহতদের রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে প্রচার করা হয়। তবে নিহতদের পরিবার ভিন্ন অভিযোগ তোলে। ইবরাহীমের বাবা বিচারবহির্ভূত গুম ও হত্যার অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
ইবরাহীমের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলে নিরীহ ছাত্র ছিল। তাকে অন্যায়ভাবে মাদরাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বহু বছর ধরে ন্যায়বিচার চাইছি।”
অন্য নিহতদের পরিবারও একই দাবি জানিয়ে বলেছেন, এরা কেউ জঙ্গি ছিল না। বরং মিথ্যা নাটক সাজিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পরিবারগুলোকে বছরের পর বছর ধরে ভয়ভীতি, নজরদারি ও হয়রানির মধ্যে থাকতে হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত নাটক। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।”
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা নতুন নয়। অতীতে র্যাব, ডিবি কিংবা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে “ক্রসফায়ার” বা “বন্দুকযুদ্ধের” নামে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্ত হয়নি বা দায় এড়ানো হয়েছে।
তবে এই মামলাটি আলাদা গুরুত্ব বহন করছে কারণ এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে সরাসরি “মানবতাবিরোধী অপরাধ” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই রায় কেবল নিহত সাতজনের পরিবারের জন্যই নয়, বরং দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ঐতিহাসিক নজির হয়ে উঠবে।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ এ ঘটনাকে “একটি দুঃখজনক অধ্যায়” হিসেবে আখ্যা দিলেও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী মাসে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে। সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।