রাজশাহীসহ চার জেলায় বন্যার আশঙ্কা, হাজারো পরিবার পানিবন্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা ও আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকা কারণে রাজশাহীর চার জেলায় কমপক্ষে ৬ হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে অনেক বাড়িঘর ও ফসলি জমি। রোববার সকাল থেকে পদ্মার পানি কমতে থাকলেও নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে ভাঙনের আরও বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সরকারি হিসেবে রাজশাহীতে ১ হাজার ৭৩৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার, নাটোরে ৮০ এবং নওগাঁয় ২৫ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়ন, সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। শিবগঞ্জ ইউএনও আজাহার আলী জানান, বন্যায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার, এবং ১ হাজার ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। এদের মাঝে ১৩ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ইউএনও নুরুল ইসলাম বলেন, দুই ইউনিয়নে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী। ৬০০ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা দিয়ে তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা, পবা, গোদাগাড়ী ও চারঘাটের পরিবার পানিবন্দী। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ থেকে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বাঘার চক নারায়ণপুর, পবার মিডিল চর ও চর মাজারদিয়ার বাসিন্দারা সবচেয়ে কষ্টে আছেন। অনেক বাড়ি হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে।

চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, “জন্ম থেকে এখানে বাস করছি। ভাঙনের কারণে আমাদের চারবার বাড়ি সরাতে হয়েছে। এবার না ভাঙলেও পানি ডুবে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হবে কি না, তা নিয়েও আতঙ্কে আছি।”

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলায় ১ হাজার ৭৩৭ পরিবার পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৮৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। সম্প্রতি পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৭.৪৯ মিটার পর্যন্ত উঠেছিল। শনিবার সকাল ৬টা থেকে পানি কমতে শুরু করে। রোববার দুপুর ১২টায় পানি ১৭.৩৫ মিটার।

আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তালপাতিলা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে আমন ধানসহ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। নাটোরের লালপুর উপজেলায় ৮০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। জেলা প্রশাসন মোট ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।

সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নিচু এলাকায় পানি ঢুকলেও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়নি। পাবনা ও জয়পুরহাটেও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা মাঠে আছে।