ইলিয়াস আলীর হত্যার চূড়ান্ত পরিণতি জিয়াউলের হাতে
ইলিয়াস আলী গুম রহস্য ও জিয়াউল আহসানের সম্পৃক্ততা নিয়ে নতুন আলোচনা
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ঘটনা বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর গুম রহস্য আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে ইলিয়াস আলী ও তার চালক আনসার আলী নিখোঁজ হন। পরদিন তাদের ব্যবহৃত গাড়িটি বনানী থেকে উদ্ধার করা হলেও তাদের আর কোনো সন্ধান মেলেনি।
এ ঘটনাকে ঘিরে সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তাল আন্দোলন দেখা দেয়। বিএনপি শুরু থেকেই দাবি করে আসছে যে রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে এ রহস্য ঘনীভূত হলেও ২০২২ সালে নতুন মোড় নেয়। বিদেশভিত্তিক অনুসন্ধানী মাধ্যম নেত্র নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়— র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি টিম ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়। সেই রিপোর্টে কয়েকজন র্যাব কর্মকর্তার নামও উঠে আসে, যার মধ্যে ছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
ঘটনার দীর্ঘ এক যুগ পর ২০২৪ সালের আগস্টে নাটকীয়ভাবে আলোচনায় আসেন জিয়াউল আহসান। তিনি তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তাকে আদালতে হাজির করা হলেও পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ করে যে, তাকে আসলে গোপন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
জিয়াউল আহসানকে ঘিরে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, তিনি শুধু রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার নন, বরং ইলিয়াস আলী গুম রহস্যের অন্যতম প্রধান সাক্ষী। অনেকের মতে, ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন বা তার পরিণতি কী হয়েছিল, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার চাবিকাঠি হতে পারেন এই সামরিক কর্মকর্তা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকার যদি সত্যিই ইলিয়াস আলী গুমের রহস্য উদ্ঘাটনে আন্তরিক হয়, তবে জিয়াউল আহসানকে নিরপেক্ষ তদন্তের মুখোমুখি করতে হবে।
অন্যদিকে, সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে— জিয়াউল আহসান দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, তা রাজনৈতিক নয় বরং আইনগত অপরাধের বিচার। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি শুধুমাত্র আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, নিরাপত্তা সংস্থা ও রাজনৈতিক বিরোধিতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আজও ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রহস্য অমীমাংসিত। বিএনপি নেতা ও সাধারণ কর্মীরা প্রতিবারই এপ্রিলে তাকে স্মরণ করে আন্দোলনে নামে। দীর্ঘ ১৩ বছরেও যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন নতুন করে জিয়াউল আহসান ইস্যু সেই রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। অনেকে বিশ্বাস করেন— যদি তার বিরুদ্ধে থাকা বাধাগুলো সরিয়ে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়, তবে হয়তো বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত গুম রহস্যের অবসান ঘটতে পারে।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন যেমন সরগরম, তেমনি জিয়াউল আহসানকে ঘিরে নতুন বিতর্ক আবারও সেই পুরনো ক্ষতকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এখন সময়ই বলে দেবে, এ রহস্য উদঘাটনের পথে বাংলাদেশ কতদূর এগোতে পারে।