রাজশাহীতে এনজিওর ঋণের ফাঁদে ও অভাবে প্রাণ গেল চারজনের
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে এক রাতে নিভে গেল চারটি প্রাণ। স্বামী, স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তান শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে নিজ ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহতরা হলেন—মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও তিন বছরের মেয়ে মিথিলা। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
শেষ চিঠিতে স্বীকারোক্তি
ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ, যা মিনারুলের লেখা বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ঋণের বোঝা ও অভাবের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
চিরকুটে লেখা ছিল, “আমি প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি, তারপর ছেলেকে, তারপর মেয়েকে। এরপর আমি গলায় ফাঁস দেব। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই।”
অন্য একটি অংশে তিনি লিখেছেন, “আমি একা যদি মরে যাই, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বাঁচবে? কষ্ট ছাড়া কিছু পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।”
এমনকি তিনি নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কারা আসবেন বা আসবেন না, সেটিও উল্লেখ করে গেছেন।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা
মতিহার থানার পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যার পর মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে সঠিক কারণ জানা যাবে।
গ্রামে শোকের ছায়া
স্থানীয়রা জানান, মিনারুল দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন এবং পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। চিঠিতেও উঠে এসেছে সেই অসহায় অবস্থা, “আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। চারজনের হাসি-খুশি ভরা ঘর এখন শূন্য, গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের নীরবতা।