সেনাপ্রধানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা

ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, এসবিপি, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি-এর নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া (ফেক) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং সেখান থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার রাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী এবং এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানিয়েছে, সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে সেনাপ্রধানের নামে একাধিক প্রোফাইল খোলা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে নানা ধরনের অসত্য, উদ্দেশ্যমূলক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা।

সেনাপ্রধানের কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নেই
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে— সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কোনো ফেসবুক প্রোফাইল বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট নেই। বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতেও তিনি কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার পরিকল্পনা রাখেন না।

জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ

জনসাধারণ ও গণমাধ্যমকে সতর্ক করে আইএসপিআর বলেছে, এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত কোনো তথ্যকে বিশ্বাস না করতে এবং সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মে দ্রুত রিপোর্ট বা ব্লক করতে। পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সাইবার মনিটরিং সেল কাজ করছে।

আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে

আইএসপিআর জানিয়েছে, এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও সংশ্লিষ্ট বিভ্রান্তিমূলক কার্যক্রমে জড়িতদের সনাক্ত করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

সতর্কতা বার্তা

আইএসপিআর জনগণকে সতর্ক করে বলেছে— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো প্রোফাইল বা পেজ সেনাপ্রধানের নামে দাবি করলেও তা সম্পূর্ণ ভুয়া।

সেনাপ্রধানের কোনো তথ্য বা বার্তা কেবল সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল মাধ্যম থেকেই প্রচারিত হয় এবং সেটিই একমাত্র সত্য ও যাচাইকৃত সূত্র।

মতামত ও বিশ্লেষণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নাম ব্যবহার করা কেবলমাত্র নৈতিকতা বিরোধী নয়, বরং এটি একটি গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেনাপ্রধানের মতো একটি সংবেদনশীল পদে থাকা ব্যক্তির নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সামরিক কৌশল এবং জনআস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান সময়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার একটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি সামরিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ঘটনা ঘটছে। তাই এই ধরনের সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় শুধু আইনগত পদক্ষেপ নয়, বরং প্রযুক্তিগত নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা জরুরি।

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর আওতায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে বাস্তবে কার্যকরভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে সাইবার অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।