সেনাবাহিনী অভিযানে রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, যুবক নিহত; সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান!

টুইট ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের আধিপত্য নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে পাঁচ দিন ধরে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষে শাহ আলম (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

জেনেভা ক্যাম্পের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শান্তি বাহিনী নামে পরিচিত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহনেওয়া সান্নু ও বুনিয়া সোহেল, যারা ক্যাম্পের একাংশে আধিপত্য বিস্তার করছে।

অপরপক্ষে পিচ্চি রাজা নামে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী গ্রুপ ক্যাম্পের অন্য অংশে নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে চাচ্ছে। যদিও উভয় গ্রুপের প্রধান সদস্যরা সরাসরি ক্যাম্পে উপস্থিত নন, তাদের অনুসারীরা ক্যাম্পে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ক্যাম্পের বিভিন্ন গলি ও অলিতে ককটেল বিস্ফোরণ এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা ২টার পর পুলিশ ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান শুরু করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে উভয় গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে সংঘর্ষকালে শাহ আলমকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। তাকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে। বুনিয়া সোহেল ও বেজি নাদিম শান্তি বাহিনী গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তারা পিচ্চি রাজার গ্রুপের মাদক ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছে। এই লড়াইয়েই সংঘর্ষের এই মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংঘর্ষের তীব্রতার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী—বিশেষ করে সেনাবাহিনী—ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। অভিযানে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, “আমাদের লক্ষ্য ক্যাম্পে শান্তি ফিরিয়ে আনা, মাদক ও অস্ত্রের চলাচল বন্ধ করা এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানিয়েছে। তাদের কথায়, “আমরা নিরাপদে বাঁচতে চাই। এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক যেন আর মাথাচাড়া না দেয়।”

তবে কয়েকজন ক্যাম্পবাসীর দাবি, শুধু অভিযান চালিয়ে কাজ হবে না, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমেই সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল সম্ভব। তারা বলেন, “যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।”

জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাস দমন নিয়ে প্রশাসনের নিকট থেকে কঠোর ও দ্রুত পদক্ষেপের প্রত্যাশা জনগণের। আগামীদিনে এই এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা সময়ই বলে দেবে।