প্রতিষ্ঠার চার দশক পরও জনবল সংকটে বিএমডিএ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বর্তমানে বিপুল জনবল সংকট সত্ত্বেও স্থিতিশীলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. তরিকুল আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা নেই বলে জানা গেছে। সদ্য প্রয়াত ড. মো. আসাদ উজ জামানের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে।
১৯৮৫ সালে ‘বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯২ সালে বর্তমান নাম গ্রহণ করে। ২০১৮ সালে সংসদে বিএমডিএ অধ্যাদেশ পাস হয়। বর্তমানে গভীর নলকূপ স্থাপন, সেচনালা নির্মাণ, খাল ও পুকুর খনন, বৃক্ষরোপণ, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৩৫টি উপজেলায় সেবা দিচ্ছে বিএমডিএ। এর ফলে উত্তরাঞ্চল খাদ্যশস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে এবং সবুজের সমারোহ বেড়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএমডিএ পুনঃখনন করেছে ১২২ কিলোমিটার খাল, ৫৬টি পুকুর ও একটি বিল; নির্মাণ করেছে ২২টি ক্রসড্যাম, স্থাপন করেছে ২টি নদীপন্টুন, ৫৬টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র, ৪৫০টি গভীর নলকূপ, ১,৩০৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন, ৬টি ফুটওভার ব্রিজ এবং উৎপাদন করেছে ৫০০ মেট্রিক টন বীজ। এ সময় ৫৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২,৬৪৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ৪,৩১৩টি পুকুর খনন, ৮০০টি ক্রসড্যাম নির্মাণ, ৪,৭৯০টি গভীর নলকূপ পুনর্বাসন, ১৫,৩৪৮ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, ৮,৫০০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন এবং ১,৫৮,৩০২ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৫,৫৬০টি গভীর নলকূপ ও ৯৯১টি এলএলপি মিলিয়ে মোট ১৬,৫৫১টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় ৬,২৮,৫৬৭ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে, যা থেকে বছরে প্রায় ৭০.৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে।
বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে মাত্র ১২৫ কর্মকর্তার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৯৫ জনই দায়িত্ব পালন করছেন ‘চলতি দায়িত্বে’। ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পর থেকে নতুন জনবল নিয়োগ হয়নি। অতীতে ১,২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও বর্তমানে সংখ্যা নেমে এসেছে ৭০৩-এ। বাকি চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে অস্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে।
বর্তমান জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য ১,৯১১ জনের প্রস্তাব কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ে ৬০০ জনের নিয়োগসংক্রান্ত আরেকটি আদেশ অপেক্ষমাণ রয়েছে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. শামসুল হোদা বলেন, “জনবল কাঠামোর বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, আশা করি শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্বাহী পরিচালক মো. তরিকুল আলম জানান, “মন্ত্রণালয়ে ৬০০ জনের নিয়োগ আদেশ অপেক্ষমাণ রয়েছে, এরপর ১,৯১১ জনের প্রস্তাবের বিষয়টি সমাধান হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় বদলির মাধ্যমে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।”
স্থানীয় কৃষক আতাউর রহমান বলেন, “উত্তরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে বিএমডিএ আশীর্বাদস্বরূপ। দেশের শস্যভাণ্ডারে পরিণত হওয়ার পেছনে এ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনন্য।”