ভারতে নিফটি-সেনসেক্সে টানা পতন
টুইট ডেস্ক: ভারতের শেয়ারবাজারে চলতি সপ্তাহে ভয়াবহ ধস দেখা গেছে। শুক্রবারের লেনদেনে নিফটি ৫০ এবং বিএসই সেনসেক্স উভয় সূচকই ০.৯৫% হারে পতিত হয়। এর ফলে টানা ছয় সপ্তাহে বাজারে পতন ঘটলো—যা এপ্রিল ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ধস।
এই পতনের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক দ্বিগুণ করা, দুর্বল আয়প্রতিবেদন ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের লাগাতার শেয়ার বিক্রি।
শুক্রবার (৮আগস্ট) নিফটি ৫০ কমে দাঁড়ায় ২৪,৩৬৩.৩ পয়েন্টে এবং সেনসেক্স নামে ৭৯,৮৫৭.৭৯ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে নিফটির পতন হয়েছে ০.৮% এবং সেনসেক্স কমেছে ০.৯%।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং বাজারে অতিরিক্ত অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের শুল্ক দ্বন্দ্ব বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, শুল্ক বিরোধ মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বাণিজ্য আলোচনা হবে না। এই ঘোষণার পর থেকেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজারে ধস ছিল বিস্তৃত। ১৬টি প্রধান খাতের মধ্যে ১৩টিই নেতিবাচক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। স্মল-ক্যাপ সূচক কমেছে ১.৪% এবং মিড-ক্যাপ সূচক কমেছে ১.১%। আইটি খাত কমেছে ০.৭%, ফার্মাসিউটিক্যালস খাত কমেছে ২.৮%, আর্থিক খাত কমেছে ১.২%, এবং জ্বালানি খাত কমেছে ১.৪%।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি ছিল বড় প্রভাবক। জুলাই মাস থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের বিদেশি পুঁজি ভারতের শেয়ারবাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা বাজারে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন কোম্পানির পারফরম্যান্সও বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজ এক সপ্তাহে ৭.৪% হারিয়েছে, যা দুর্বল ত্রৈমাসিক ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতের বস্ত্র রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেপিআর মিল, গোকলদাস এক্সপোর্টস, ভারদমান টেক্সটাইলস এবং ট্রাইডেন্ট—এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার ৪.২% থেকে ১২.১% পর্যন্ত কমেছে।
অন্যদিকে কিছু কোম্পানির ভালো পারফরম্যান্স ছিল স্বস্তিদায়ক। হিরো মোটোকর্প আশ্চর্যজনকভাবে ভালো আয় দেখানোর পর এক সপ্তাহে ৬.৭% বেড়েছে। এছাড়া LIC এর ত্রৈমাসিক মুনাফা বৃদ্ধির কারণে শেয়ার ৩.২% বেড়েছে। তবে ভারতী এয়ারটেল ব্লক ডিলে ডিসকাউন্টে শেয়ার বিক্রির কারণে ৩.৩% হারিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষক সন্দীপ বাগলা জানিয়েছেন, “ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ইঙ্গিত দিয়েছে যে অর্থনীতিকে সহায়তা করার জন্য আর অতিরিক্ত মুদ্রানীতিগত সুবিধা আশা করা উচিত নয়। এই অবস্থানও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
সামগ্রিকভাবে ভারতীয় শেয়ারবাজার এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক শুল্ক নীতি, দুর্বল আয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার—এই চারটি বড় কারণে আগামী সপ্তাহগুলোতেও বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে।