আড়াইশ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা
আড়াইশ প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা।
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে বিশেষ নীতি সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছিল, তার আওতায় এখন পর্যন্ত ২৫০টি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত সুবিধা পেয়েছে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১,২৫০টি আবেদন জমা পড়ে এবং যাচাই-বাছাই শেষে এই ২৫০টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
নীতিগত সহায়তা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—
গাজী গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, এমবিয়েন্ট স্টিল (বিডি), জিপিএইচ ইস্পাত, প্রাইম গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, সিল্কওয়েজ গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, ডায়মন্ড স্পিনিং মিলস, মীম গ্রুপ (আলেমা টেক্সটাইল), দেশবন্ধু গ্রুপ, এসএমএ গ্রুপ (এএ নিট স্পিন), বিইউসি অ্যাগ্রো, রাইজিং স্টিল, সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস, ইন্টেনসিটি লিমিটেড, গ্লোবাল অ্যাসেট, ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস, এপেক্স উইভিং, সাদাব ফ্যাশন, অংকুর স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “নীতিগত সহায়তা কমিটি প্রতিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তারাই এই সহায়তা পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। আগের সরকারে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এবং বারবার ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই এবারও তালিকায় আছে। উদাহরণস্বরূপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ গত সরকারের সময়েও পুনর্গঠনের সুবিধা পেয়েছিল, এবারও পেয়েছে। দেশবন্ধু গ্রুপ, যাদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছিল, তারাও পুনরায় সুবিধা পেয়েছে।
একইভাবে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের গাজী গ্রুপ, সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম খানের বেঙ্গল গ্রুপ-এর নামও রয়েছে এই তালিকায়।
এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, “যারা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত এবং ঋণখেলাপির রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও বারবার নীতি সহায়তা পাচ্ছে, তা দৃষ্টিকটু। ঢালাওভাবে সহায়তা না দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নির্বাচন করে সুবিধা দেওয়া উচিত।”
গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপি নয়—এমন বড় অঙ্কের (৫০ কোটি টাকার বেশি) ঋণ পুনর্গঠনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করে। তবে কোনো সুস্পষ্ট কাঠামো বা সার্কুলার ছাড়াই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রক্রিয়াটি নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, “একজন গ্রাহক একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন তিনি পুনর্গঠনের আবেদন করলে সব ব্যাংকের সম্মতি না পেলে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। আবার আইনগত কাঠামো অনুসরণ করাও সময়সাপেক্ষ।”
এই বাস্তবতায় নতুন কমিটি মত দিয়েছে—যেসব আবেদন সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব, তা ব্যাংক নিজেরাই দেখবে। কেবল জটিল ও নীতিগতভাবে স্পর্শকাতর কেসগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ মূলত কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের আর্থিক খাতকে সচল রাখতে নেওয়া হয়েছে।
তবে এতে রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং পুরনো ঋণখেলাপিদের অন্তর্ভুক্তি নীতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।