রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, বদলায়নি দুর্নীতির চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলছে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি আর অনিয়মের ধারাবাহিকতা। উপপরিচালক বদল হলেও বন্ধ হয়নি দালালচক্রের দাপট, কমেনি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।

অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ আবেদনকারীরা ফাইল জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে এলে পাওয়া যায় ‘বিশেষ সুবিধা’। দালাল-প্রক্রিয়ার ফাইলগুলো সরাসরি উপপরিচালকের কক্ষে চলে যায়। সেখানে স্বাক্ষরের পর সহকারী পরিচালক দ্রুত তথ্য এন্ট্রি করে দেন, এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়।

সাবেক উপপরিচালক রোজী খন্দকারের আমলেও অনিয়মের প্রতিবাদে রাজশাহীর নাগরিক সমাজ আন্দোলনে নেমেছিল। তাঁর বদলির পর দায়িত্ব পান আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির। তবে অভিযোগ বলছে, তাঁর সময়েও চলছে একই অনিয়ম। আবেদনকারীরা বলছেন— “উপপরিচালক বদলালেও দুর্নীতির চিত্র বদলায়নি”।

ভুক্তভোগীরা জানান, দালাল ছাড়া ফাইল জমা দিতে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ত্রুটির কথা বলে হয়রানি করেন। অথচ দালালের মাধ্যমে এলে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ফাইল যাচাই-বাছাই ছাড়াই সই হয়ে যায়। প্রতিদিন এসব প্রক্রিয়ায় জমা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা, যা চলে যাচ্ছে অফিসের ভেতরের একটি প্রভাবশালী চক্রের পকেটে।

অভিযোগ রয়েছে, নিচতলায় ফাইল গ্রহণের দায়িত্বে থাকা অনেক কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে ডেস্কে অনুপস্থিত থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ফাইল জমা দিতে ব্যর্থ হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শক্তিশালী দালাল নেটওয়ার্ক এবং অভ্যন্তরীণ সহায়তা ছাড়া এ ধরনের অব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকতে পারে না। এর সঙ্গে রয়েছে জনবল সংকট, ছবি তোলার ঘরের সীমাবদ্ধতা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অভাব।

নাগরিকদের দাবি, এই অনিয়ম বন্ধে চাই স্বাধীন তদন্ত, দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা এবং পাসপোর্ট অফিসের কাঠামোগত সংস্কার। পাশাপাশি জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বাড়ানো জরুরি। না হলে শুধু উপপরিচালকের নাম বদলালেও রাজশাহীতে দুর্নীতির বাস্তবতা রয়ে যাবে একই রকম।

এ বিষয়ে জানতে উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকিরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।