ড. কলিমউল্লাহর অপকর্ম ফাঁস

ড. কলিমউল্লাহ

দুর্নীতির পাহাড়: সাবেক ভিসি ড. কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর আগে ১৮ জুন তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

তবে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেননি তিনি। ইতোমধ্যে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ বেরোবির অধিকার সুরক্ষা পরিষদ ড. কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে ১১১টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে তার একাধিক পর্যায়ের অপরাধ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।

সংঘবদ্ধ দুর্নীতির অভিযোগ

২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে প্রশাসনিক, একাডেমিক ও আর্থিক খাতে বিস্তর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে গেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি এসব অপকর্ম সংঘবদ্ধভাবে করলেও মূল নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং কলিমউল্লাহ।

নিয়োগ ও আর্থিক দুর্নীতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান জানিপপ ও নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারি ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে কোটি কোটি টাকার ক্রয় কার্যক্রমে অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের তথ্যও উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে।

একাডেমিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক পদ দখল

প্রায় তিন বছর ধরে একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদ নিজের হাতে রেখে শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিপর্যয় সৃষ্টি করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে ছয়টির মধ্যে চারটি অনুষদের ডিন পদ নিজের হাতে রাখার অভিযোগও রয়েছে। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে কিছু পদ ছাড়লেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদ তিনি আঁকড়ে ধরে ছিলেন।

শিক্ষক-কর্মচারী দমন ও আদালত অবমাননা

কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বললেই শিক্ষকদের সতর্ক ও শোকজ করার নজির রয়েছে। কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই তিনি ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। আদালতের নির্দেশনা না মানা, সিন্ডিকেটের অপব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দমন করা তার প্রশাসনিক ধারা হয়ে দাঁড়ায়।

‘দুর্নীতির আখড়া’ লিয়াজোঁ অফিস

ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই মোহাম্মদপুরে ‘আফরোজা গার্ডেন’-এ লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করে সেটিকে মূল প্রশাসনিক অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। এই অফিসে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের পাশাপাশি ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির রেকর্ড

উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর ১৩৫২ দিনের মধ্যে মাত্র ২৩৭ দিন তিনি ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। তাও সম্পূর্ণ দিন নয়—বেশিরভাগ সময় এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য হাজির হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।