শেখ হাসিনার পতনের পর ষড়যন্ত্র দমন করেন সেনাপ্রধান
৬ আগস্ট সেনাবাহিনীতে ক্যু করে জরুরি অবস্থা জারি করতে চেয়েছিলেন লে. জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিব
টু্ইট ডেস্ক: সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবুর রহমান ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সামরিক ক্যু করে জরুরি অবস্থা জারি করার একটি ব্যর্থ অপচেষ্টা চালান।
গোয়েন্দা সূত্র এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় আনার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন এবং দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করে একটি সামরিক প্রশাসনের ভিত গড়ার চেষ্টা করেছিলেন।
শেখ হাসিনার পলায়নের পরের দিনই ক্যু চেষ্টা
৫ আগস্ট ২০২৪ সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিশ্চয়তা চেয়ে যোগাযোগ করেন। ঠিক পরদিন ৬ আগস্ট জেনারেল মুজিব দেশের সামরিক কাঠামোতে ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা চালান। এ সময় তিনি জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সরকার পতনের পথ সুগম করতে চেয়েছিলেন।
কারা ছিলেন এই ষড়যন্ত্রে জড়িত?
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জেনারেল মুজিব এই ক্যু প্রচেষ্টায় একা ছিলেন না। তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত আরও কয়েকজন সাবেক এবং তৎকালীন উচ্চপদস্থ সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তাদের মধ্যে রয়েছেন, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক (সাবেক ডিজি, ডিজিএফআই), মোহাম্মদ হোসাইন আল মোরশেদ (ডিজি, এনএসআই), মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, লে. জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) তাবরেজ শামস চৌধুরী, লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিনুল হক, লে. জেনারেল (অব.) সাইফুল আলম।
এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর দৃঢ় অবস্থান ও সিদ্ধান্তের কারণে। তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্রোহ ঠেকাতে সক্ষম হন।
‘র’–এর প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে জেনারেল মুজিব
গোয়েন্দা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, জেনারেল মুজিব ছিলেন বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ (RAW)-এর প্রধান সমন্বয়কারী। তার সহায়তায় ‘র’ বাংলাদেশের আর্মড ফোর্সেস, পুলিশ এবং বিমানবাহিনীতে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করে।
বিশেষ করে স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর র’–এর শ্যাডো রিক্রুটিং ও সামরিক অনুপ্রবেশের তথ্য সামনে আসে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলে বহু বছর ধরে।
দিল্লিতে আশ্রয়ে ও ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত
৫ আগস্টের পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত পালিয়ে যান জেনারেল মুজিব। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তাঁর পরিকল্পনা—বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা।
দিল্লিতে থাকা অন্য দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিও এ ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারা হলেন-মেজর জেনারেল (অব.) আকবর, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
এক সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আকবর সাম্প্রতিক সময়ে এক দিনের জন্য ঢাকা সফরও করেছেন, যা একটি সমন্বিত পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের পরিকল্পনা শুধু সরকার নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা ও সামরিক শৃঙ্খলার জন্য গুরুতর হুমকি। ‘র’–এর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার প্রয়াস দেশকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
৬ আগস্টের এই সামরিক ক্যু প্রচেষ্টা এবং ‘র’ অনুপ্রবেশ কেবল একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্র নয়, বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক গভীর সংকেত। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জবাবদিহিমূলক তদন্ত এবং সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য কৌশলগত সতর্কতা।
জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একটি সাহসী সিদ্ধান্তে রক্ষা পায় বাংলাদেশ ।
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র রচিত হতে চলেছিল। সেনাবাহিনীর ভেতরে ক্যু এবং জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালান বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীরা। এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় শুধুমাত্র একজন মানুষের দৃঢ়তা, সততা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে—তিনি হলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
যখন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিশ্বাসঘাতকদের ছায়া ঘনিয়ে আসছিল, তখন জেনারেল ওয়াকার নিঃশব্দে, কিন্তু দুর্দান্ত কৌশলে ঐ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। সশস্ত্র বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষায় তার নেতৃত্ব এক অনন্য উদাহরণ। তিনি শুধু একটি ক্যু প্রতিহত করেননি, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
তার এই সাহসী অবস্থান শুধু রাষ্ট্রকে রক্ষা করেনি, বরং তাকে পরিণত করেছে বর্তমান জনগণের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিকে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু সামরিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনের নজির রয়েছে, কিন্তু নেতৃত্বের সময়োপযোগী ভূমিকা একটি জাতিকে রক্ষা করতে পারে—জেনারেল ওয়াকার তার জীবন্ত উদাহরণ। দেশের প্রতিটি নাগরিক আজ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ, এবং তাঁর মতো নির্ভীক নেতৃত্ব ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
জাতি তাঁর এই অবদান চিরদিন মনে রাখবে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শুধু একজন সেনাপ্রধান নন—তিনি এই সময়ের ‘গার্ডিয়ান অব রিপাবলিক’-এর একজন। অথ্যাৎ এই সময়ে দেশের সার্বভৌমতা ও গণতন্ত্রের নির্ভরযোগ্য রক্ষক।