যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ‘আত্মঘাতী’, বলছে ভারতের এসবিআই
টুইট প্রতিবেদন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিকে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)।
ব্যাংকটি তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে হুঁশিয়ার করে বলেছে, এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ এবং পুরো অর্থনীতি।
দ্বিগুণ শুল্কভার: ভারতের ওপর ৫০% পর্যন্ত
গত ৩১ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ঘোষণায় বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। এর অংশ হিসেবে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর প্রথম ধাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়। পরে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার অজুহাতে ভারতের ওপর আরেক দফা ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
এসবিআই বলছে, এভাবে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে পারে এবং এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে তিনটি স্তরে, ১. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, ২. দ্রব্যমূল্য দ্রুত বাড়বে, ৩. ডলারের মানে পতন ঘটবে।
এই তিনটি চাপ একসঙ্গে দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা হতে পারে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণ। সাধারণ পরিবারে ব্যয়ের বোঝা বাড়বে।
এসবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। এতে করে, একটি সাধারণ গৃহস্থ পরিবারকে বছরে গড়ে অতিরিক্ত ২,৪০০ ডলার ব্যয় করতে হবে, নিম্ন আয়ের পরিবারে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১,৩০০ ডলার, উচ্চ আয়ের পরিবার বছরে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয়ে পড়তে পারে।
এই অতিরিক্ত ব্যয়মূল্য দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করবে এবং দেশজ উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ভারতীয় প্রস্তুতকারীদের লাভ কমলেও ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন জনগণ
এসবিআই সতর্ক করে জানায়, এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে ভারতীয় পোশাক, জুতা, ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে যাবে। কারণ ভারত বহু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক ও উপকরণ সরবরাহ করে। ফলে, ভারতীয় প্রস্তুতকারীরা লাভ হারাতে পারেন, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মার্কিন ভোক্তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি কেবল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির জন্যও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, যা ফেডারেল রিজার্ভের আর্থিক নীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাণিজ্য যুদ্ধের এই পর্বে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এসবিআইয়ের সতর্ক বার্তা শুধু ভারত নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। একতরফা শুল্ক নীতি বিশ্ববাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা বাড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত সেই ভারসাম্যহীনতার চাপে পড়ে যাবে আমেরিকান অর্থনীতি নিজেই।